দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুরতে যাওয়ার জন্য যদি একটি অভয়ারণ্য পাওয়া যায় তাহলে বেশ ভালোই হয়। তাহলে চলে আসুন সীতাকুণ্ডের হাজারিখিল অভয়ারণ্য ঘুরতে। সময়টা বেশ ভালোই কাটবে।
চট্টগ্রাম শহর হতে ৬২ কিলোমিটার উত্তরে রামগড়-সীতাকুণ্ড বনাঞ্চলের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত ফটিকছড়ি হাজারিখিল অভয়ারণ্য প্রকৃতির যেনো এক শোভা বর্ধন করে চলেছে। বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ও প্রাণীর আবাসস্থলের কারণেই ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট এই বনাঞ্চলটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই হাজারিখিল অভয়ারণ্যে প্রায় ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, রয়েছে ১২৩ প্রজাতির পাখি, সেখানে ৮ প্রজাতির উভচর, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ২৫০ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদও রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী এবং পাখির মধ্যে রয়েছে বানর, হনুমান, বিলুপ্ত প্রায় বনছাগল, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, হুদহুদ পাখি, নীল কান্ত, আবাবিল, বেঘবৌ, কাও ধনেশ ইত্যাদি।
হাজারিখিল অভয়ারণ্যের শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে ক্যাম্পিং করার পাশাপাশি চা বাগানের বিভিন্ন ট্রি এক্টিভিটিসে অংশ গ্রহণের সুযোগও রয়েছে। বন্যপ্রাণীর ট্রি এক্টিভিটিসের এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ১০০ টাকা। এছাড়াও প্রকৃতির মায়াময় রূপ দেখতে চাইলে চা বাগানের অসাধারণ হাজারিখিল ট্রেইলে ঢুকে পড়তে হবে আপনাকে। ঝিরিপথ এবং ক্যাসকেডের ভিতর দিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের ৭/৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হাজারিখিল ট্রেইল কালাপানি ঝর্ণায় গিয়ে শেষ হয়।
যাবেন কিভাবে
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে। চট্টগ্রাম হতে বাসে করে ফটিকছড়ি এসে সিএনজি নিয়ে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হাজারিখিল অভয়ারণ্যে আপনাকে পৌঁছাতে পারবেন।
ঢাকা হতে চট্টগ্রাম যেতে হলে ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল হতে সৌদিয়া, ইউনিক, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, এস. আলম, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের এসি-নন এসি বাস পাওয়া যায়। প্রতি সীটের জন্য বাস ভাড়া ৫০০ হতে ১২০০ টাকা।
তাছাড়া ট্রেনেও চট্টগ্রাম থেকে পারেন। সেক্ষেত্রে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইল ট্রেনেও চট্টগ্রামে যেতে পারেন। তাছাড়া ঢাকা হতে বেশকিছু বিমান সংস্থা সরাসরি চট্টগ্রাম যাওয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। ইচ্ছে করলে বিমানেও যেতে পারেন।
থাকবেন কোথায়
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে ক্যাম্পিং করার সুযোগও রয়েছে। যদি ক্যাম্পিং করতে না চান তাহলে চট্টগ্রামের ষ্টেশন রোড, জেএসসি মোড় বও আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল পেতে পারেন। যার মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল মিসখা, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল হিলটন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল সাফিনা, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সিলমন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেল।
খাবেন কোথায়
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে অবস্থিত ভাতঘরেও ইচ্ছে করলে আপনি খেতে পারবেন। আবার ইচ্ছে হলে অভয়ারণ্য কাছে অবস্থিত বিবির হাটে গিয়েও খাবার খেতে পারেন অনায়াসে। সুযোগ থাকলে আপনি চট্টগ্রামের জনপ্রিয় মেজবানি ও কালা ভুনা খেয়ে দেখতে পারেন।
হাজারিখিল ভ্রমণ সম্পর্কে কিছু পরামর্শ
# হাজারিখিল ট্রেইলে ঘুরে দেখা ও ট্রি এডভেঞ্চারের ইচ্ছে থাকলে সকাল সকাল হাজারিখিলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে হবে।
# ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে গাইডের সাহায্যও নিতে পারেন।
# ট্রি এক্টিভিটিস করার সময় জ্যাকেট ও হেলমেট পরিধান করতে হবে।
# হাজারিখিল ট্রেইলের রাস্তা অনেক বেশি পিচ্ছিল তাই চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
# জোঁক উপদ্রব ঠেকাতে আপনি সঙ্গে লবন ও সরিষার তেল নিতে পারেন।
চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ওয়ার সিমেট্রি, ফয়েজ লেক, জাম্বুরি পার্ক, মহামায়া লেক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com