দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গ্রামবাসীদের ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই ৯ যুবককে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে গ্রামেরই একটি আম বাগানে!। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে।
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই ভারতেও দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশটির পশ্চিমবঙ্গের ৯ শ্রমিক গ্রামে না ফিরে আমবাগানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া হতে ৯ যুবক মালদহে তাদের নিজ গ্রামে ফেরেন। তবে করোনা ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় বাড়িতে ঢোকেননি এই ৯ যুবক। এলাকার কালিন্দ্রী নদীর তীরের আমবাগানে নিজেরাই তৈরি করেছেন একটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র। ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া অস্থায়ী সেই শিবিরে পরিবার, গ্রামবাসীর হতে দূরে দিন কাটাচ্ছেন মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকের সতীচড়া গ্রামের এই ৯ জন বাসিন্দা।
আমবাগানে কোয়ারেন্টিনে থাকতে তাদেরকে স্থানীয় ক্লাব এবং জনগণ সহায়তাও করেছে। এরাই এই শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থাও করেছে।
জানা গেছে, হাওড়ায় অবস্থান করে শ্রমিকের কাজ করতেন সতীচড়া গ্রামের ওই ৯ যুবক। লকডাউনে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়ে যান তারা। হাওড়াতেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তারা। নিজেদের কাছে থাকা টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।
পরে নীহাররঞ্জন ঘোষের উদ্যোগে গত ২৫ এপ্রিল গ্রামে ফেরেন চিন্টু হালদার, সিন্টু হালদারসহ ওই ৯ শ্রমিক। মালদহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে তারা স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তবে বাড়িতেও তাদের ঘর সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিলো না। একেক জনের বাড়িতে যে দুই-একটা ঘর রয়েছে তাতে কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মেনে চলা সম্ভব হবে না। তাই বাড়িতে না ঢুকে কালিন্দ্রী নদীর ধারে আমবাগানে তাঁবু গেড়েছেন ৯ শ্রমিক। বাঁশ, ত্রিপল দিয়ে তৈরি করেছেন ছাউনি। গ্রামবাসী প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য চৌকি ও মশারির ব্যবস্থাও করে দেন। রান্নার জন্য দেওয়া হয় গ্যাস এবং চুলা। দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।
৯ জনের একজন সিন্টু হালদার সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘পরিবার, গ্রামের মানুষদের কথা ভেবেই স্বেচ্ছায় বাগানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও সপ্তাহখানেক থাকার পর আবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবো।’
নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘ওই যুবকদের সচেতনতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সরকারি কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, ভারতে এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৯৮০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৩২৩ জন মানুষ।
তথ্যসূত্র: আমাদের সময়
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।