দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গতকাল (রবিবার) ঈদ উদযাপন করেছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। করোনায় মধ্যপ্রাচ্যে বিবর্ণ ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
বরাবরের মতো এবার ঈদের আমেজ একেবারেই ছিলো না। কারণ ঘর থেকে বের হওয়া বা মসজিদে যাওয়ার অনুমতিও দেয়নি বেশিরভাগ দেশ।
সারাবিশ্ব কাঁপছে মহামারি করোনা আতঙ্কে। প্রাণঘাতি এই করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে জনসমাগম, মসজিদে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং কাতার সরকারের পক্ষ হতে জানানো হয় যে, এবার মসজিদগুলো বন্ধ থাকবে। যে কারণে মুসল্লিরা আগের মতো ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেননি।
একই সঙ্গে এসব দেশে ঈদে ঘোরাঘুরি বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া কিংবা কাওকে উপহার দেওয়া, শিশুদের টাকা বা অন্য কোনো উপহার দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ঈদের ছুটিতে ২৪ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করে সৌদি সরকার। এজন্য ঈদের নামাজ নিজ নিজ ঘরে আদায় করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে মুয়াজ্জিনরা ভোরবেলা থেকে ঈদের নামাজ পর্যন্ত মাইকে ঈদের তাকবির প্রচার করেছেন।
সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ হলেও সাধারণ জনগণ তাতে অংশ নিতে পারেনি। আগের দিন শনিবার সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওমানেও সব ধরনের জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাড়ির বাইরে বের হলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেখানেও। যে কারণে ঈদেও কোনো ধরনের উৎসব, আনন্দ করতে পারছেন না ওমানের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
গত ১০ মে হতে ২০ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয় কুয়েতে। যে কারণে সেখানে আগের মতোই ঈদের কোনো আমেজ ছিলো না। এ বছর লোকজনকে ঘরে বসেই ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে।
গত মার্চ মাস হতেই বাহরাইনে সব মসজিদ বন্ধ রাখা হয়। রেডিও ও টিভিতে আল ফাতেহ গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে ঈদের নামাজ সম্প্রচার করা হয়। সেখানকার বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা সকাল থেকেই ঈদের তাকবির প্রচার করেন কিন্তু মুসল্লিরা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেননি।
কাতারেও ঈদের মধ্যে কড়াকড়ি জারি ছিলো। সেখানেও ৩০ মে পর্যন্ত সব বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। ঈদেও তা বহাল ছিলো।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ থাকলেও ইরানে কিছুটা শিথিলতা আসে। সেখানে ধীরে ধীরে অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায়ে দু’ঘণ্টার জন্য ইরানের মসজিদগুলো খুলে দেওয়া হয়। এর আগে খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায়েরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতেও কড়াকড়ির মধ্যেই এবার ঈদ উদযাপিত হলো। আগের মতোই এবারের ঈদে কোনো আনন্দ নেই, ঘোরাঘুরিও নেই। করোনা যেনো এবারের ঈদের সবকিছুকেই একেবারে বিবর্ণ করে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।