দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দীর্ঘ পথযাত্রায় প্রচণ্ড গরম, ক্ষুধা ও ক্লান্তির কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে গেছেন এক মা। তার নিথর দেহ চাদরে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে রেল স্টেশনে। মৃত মাকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন এক শিশু!
এই মায়ের কোলেই ছিল ছোট্ট একটি শিশু। মা মারা গেছেন; সেটি বোঝার ক্ষমতাও হয়নি ওই শিশুর। রেলস্টেশনে চাদরে ঢেকে রাখা মাকে ঘুমিয়েছেন মনে করে জাগানোর চেষ্টা করে শিশুটি। হৃদয়বিদারক এই দৃশ্য ভারতে লকডাউনের কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের করুণ দুর্দশার চিত্রই তুলে ধরেছে; যা মূলত নাড়া দিয়েছে দেশটির কোটি কোটি মানুষকে।
ভারতের বিহার রাজ্যের মুজাফফরপুর রেল স্টেশনের এই দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায় যে, চাদরে ঢাকা মৃত মায়ের পাশে খেলছে ওই শিশুটি। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বারবার মায়ের শরীর থেকে চাদর সরিয়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শিশুটি দেখছে, চাদর সরলেও তার মা আর নড়ছেন না।
মুজাফফরপুরের রেলস্টেশনে সোমবার রাতে বিশেষ অভিবাসী ট্রেনে চেপে ফিরে আসেন ওই মা। অতিরিক্ত গরম, ক্ষুধা ও দীর্ঘযাত্রার ক্লান্তির কারণে স্টেশনে নামার পরই চেতনা হারিয়ে ফেলেন ওই মহিলা। একই স্টেশনে দুই বছর বয়সী এক শিশুও অনাহারে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মারা যায়। এই শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গে দিল্লি হতে বিহারে ফিরে আসে গত রবিবার।
ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে, খাবার এবং পানির অভাবেই তিনি মারা গেছেন। রবিবার গুজরাট থেকে একটি ট্রেনে করে বিহারে আসছিলেন ওই মহিলা। সোমবার ট্রেনটি মুজাফফরপুরে পৌঁছানোর পরই তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মরদেহ রাখা হয়েছে। এই সময় তার ছোট্ট শিশুটি মৃত মায়ের পাশে খেলতে থাকে। মাঝে মাঝে মৃত মাকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে সে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে পাশে থেকে অন্য একজন শিশুটিকে দূরে নিয়ে যান।
গত ২৫ মার্চ ভারতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন জারি করা হয়। তারপর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। চাকরি হারিয়ে অর্থ কষ্টে থাকা এই শ্রমিকরা হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাড়িও ফেরেন। তবে ইতিমধ্যে অনেকেই বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই গাড়ি চাপায়, অনাহারে ও ক্লান্তির কাছে হেরে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে।
তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের এমন দুর্দশার খবরে গণমাধ্যমে আসার পর বিশেষ ট্রেন সেবা চালু করে। তবে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের বেড়াজালে অনেক শ্রমিকরা এসব ট্রেনে করেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। যা শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার যাত্রায় মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।