দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সেটি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো কবে নাগাদ পাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। তাই কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের উৎপাদন খরচ দিতে চান বিল গেটস।
তবে ভ্যাকসিন নিয়ে এই সংশয় দূর করতে করোনার সম্ভাব্য কার্যকর ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ উৎপাদনের ব্যয় বহন করতে চান বিশ্বের এই শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটস।
সবচেয়ে আশাব্যাঞ্জক ভ্যাকসিনগুলোর দিকেই গভীর নজর রাখছেন মার্কিন এই ধনকুবের। কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পূর্বেই উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিল গেটস।
এছাড়াও যেসব নিম্ন-আয়ের দেশের সামর্থ্য নেই সেই সব দেশকে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তাও করতে চেয়েছেন তিনি। ভ্যাকসিন কেনার এই কাজে অলাভজনক সংস্থা গাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছেন মাইক্রোসফট করপোরেশনের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
গত বৃহস্পতিবার করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। পরে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ উৎপাদন ও সবার জন্য তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মাইক্রোসফট করপোরেশনের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
তিনি বলেন, এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় একাধিক ভ্যাকসিন উৎপাদন কারখানা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি আমরা বছরে ১০০ অথবা ২০০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে পারি তাহলে এর বরাদ্দে জটিল কোনও সমস্যাই হবে না।
এই ধনকুবের বলেন, যদি বছরে মাত্র ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করা যায়; তাহলে বড় ধরনের সমস্যা থেকেই যাবে।
করোনার কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে জীবনরক্ষাকারী সব ধরনের ভ্যাকসিনের প্রাপ্তিতেই বিঘ্ন ঘটেছে এবং এই মহামারি বৈশ্বিক নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিও ব্যাহত করেছে। যে কারণে লাখ লাখ শিশু ডিপথেরিয়া, হাম এবং পোলিওর মতো রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে এলে তা গাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের বৃহৎ পরিসরের সরবরাহ কাজে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে সিয়াটলভিত্তিক বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন নামে এই সংস্থাটি।
গেটস বলেছেন যে, এমনকি এই কাজে ব্যয়ের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে গাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেঠ বার্কলি বলেন, বিশ্বে এই টিকাদান হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স বলেছেন, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গাভি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তহবিলের জোগান দেওয়ার প্রস্তাব করলেও ওষুধ কোম্পানিগুলো এই ভ্যাকসিনের দাম মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বিল গেটস বলেছেন যে, করোনার কিছু ভ্যাকসিনের একটি ডোজের দাম ৪ হতে ১৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। মার্কিন এই ধনকুবের বলেন, তিনি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে এমন ৮টি ভ্যাকসিনকে আশাব্যাঞ্জক হিসেবেই দেখছেন। আমরা এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি যদি ঠিক মতো কাজ করে তাহলে আমরা এগুলোর দিকে নজর দেবো।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।