দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ না ফেরার দেশে চলে গেলেন সিলেট সিটি করপোরেশন এর সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (ইন্নাল্লিলাহি ….রাজিউন) আজ (সোমবার) ভোর ৩টার দিকে রাজধানীর সিএমএইচএ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন হওয়ার পর হতেই যে নামটি মেয়র হিসেবে মিশে রয়েছে তা হলো বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। শুরু থেকেই ১০ বছর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সুখ দুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। তারপর নগরপিতার আসনটি ছাড়েন কিন্তু তারপরও তার নামের পাশে থেকে যায় ‘মেয়র কামরান’।
তার মৃত্যুতে কাঁদছে সিলেট নগরবাসী। করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে যিনি বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেই করোনাই কেড়ে নিল বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের প্রাণ।
১৯৫৩ সালে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জন্ম। বাবার লিখে রাখা নোটটি হারিয়ে যাওয়ায় তারিখটা জানা হয়নি।তাই বছরের প্রথম দিনই পালন করতেন নিজের জন্মদিন। জিন্দাবাজার দুর্গাকুমার পাঠশালায় তার পড়াশোনায় তাঁর প্রথম পাঠ। তারপর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়। তারপর ২০০৩ সালের ২০ মার্চের নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপির প্রার্থী এমএ হককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সিলেটের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগে ১৯৭৩ সালে সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
ওয়ান ইলেভেনের সময় জেলে থেকেও কামরান বিএনপির প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হককে আবারও পরাজিত করে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে তিনি হেরে যান। তারপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও আরিফের কাছে হেরে যান বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তবে তারপরও তিনি নগরবাসীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। এই নগরের মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি সব সময় পাশেই ছিলেন।
ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়া প্রবীণ রাজনীতিবিদ ১৯৭৩ সালে যখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র তখন শুরু হয় দেশের প্রথম পৌর নির্বাচন। এই সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় ৬৪৪টি ভোট পেয়ে তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় সিলেট পৌরসভার মাত্র ৫টি ওয়ার্ড ছিল। তোপখানা ছিল ৩নং ওয়ার্ডের অধীনে। তারপর ১৯৭৭ সালে আবার নির্বাচন হয়। তখনও তিনি কমিশনার নির্বাচিত হলেন।
তারপর কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যান কামরান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড হতে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখনও তার প্রতীক ছিল আনারস।
সেই সাফল্যের পথ ধরে এভাবে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি।তবে ২০১৩ সালে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতে বিরোধী দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয় সাবেক জনপ্রিয় এই মেয়রকে।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্বও পালন করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।