দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস রোগীদের ঘায়েল করার মূল স্থান হলো ফুসফুস। এই ফুসফুসে সংক্রমণের কারণেই দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও হার্টের ক্ষতির শিকার হতে পারেন করোনা রোগীরা। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতিও করতে থাকে, এমনটিই দেখা গেছে নতুন এক গবেষণায়।
অস্ট্রিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস, এমনকি ভেন্টিলেটর চিকিৎসা নেওয়া করোনা রোগীর ক্ষেত্রেও মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ফুসফুস নিজ থেকেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরও করোনা রোগীরা সাধারণ উপসর্গেও ভুগতে পারেন, তবে ১২ সপ্তাহ পরে এইসব উপসর্গ দূর হয়ে যায়।
অস্ট্রিয়ার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের দেড় শতাধিক করোনার রোগীর ওপর এক গবেষণা চালানো হয়। হাসপাতাল হতে ছাড়পত্র পাওয়ার ৬, ১২, এবং ২৪ সপ্তাহ পরে এসব রোগীদের পুনরায় পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবারই রোগীদের ক্লিনিক্যাল টেস্ট, ল্যাব টেস্ট, রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বিশ্লেষণ ও ফুসফুসের কার্যকারিতার উপর বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়।
করোনামুক্ত হওয়ার ৬ সপ্তাহ পরের পরীক্ষায় অর্ধেকেরও বেশি রোগীর একটি স্থায়ী উপসর্গ বিদ্যমান থাকতে দেখা গেছে যেমন শ্বাসকষ্ট কিংবা কাশি। সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ৮৮ শতাংশ রোগীর ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ততা পাওয়া গেছে। ৪৭ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও ১৫ শতাংশ রোগীর কাশি বিদ্যমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
অপরদিকে ১২ সপ্তাহ পরের পরীক্ষায় দেখা যায় যে, ৩৯ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও ১৫ শতাংশ কাশির সমস্যাও রয়েছে। অপরদিকে ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ততা পাওয়া গেছে ৫৬ শতাংশ রোগীর।
২৪ সপ্তাহ পরের পর্যালোচনা এখনও শেষ করেনি গবেষকরা। তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এক সময় ফুসফুস নিজ থেকেই মেরামত কাজ করতে থাকে ও রোগীদের ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
এই বিষয়ে গবেষক দলের সদস্য ডা. সাবিনা সাহানিক বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে ফুসফুস আসলেও নিজেকে মেরামত করতে পারে। আমাদের গবেষণায় দুঃসংবাদটি হলো, করোনামুক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ততা থাকে। অপরদিকে সুসংবাদ হলো, ফুসফুসের এই ক্ষতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতেও থাকে। যা ইঙ্গিত বহন করে যে, ফুসফুসের নিজস্ব একটি মেরামত ব্যবস্থা রয়েছে।’
এই গবেষণাপত্রটি চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় রেসপিরেশন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হয়।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।