দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সপ্তাহের সেরা দিন হলো শুক্রবার তথা জুমার দিন। এটি পৃথিবীর অন্যতম তাৎপর্যবহ দিবস হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। আজ জানুন জুমার নামাজ ও তার গুরুত্ব-তাৎপর্য সম্পর্কে।
জুমা নামে পবিত্র কোরআনেও একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা: জুমুআ, আয়াত : ১০)।
জুমার নামাজ অর্থাৎ ‘শুক্রবারের নামাজ’ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। জুমু’আহ (جُمُعَة) শব্দটি হলো আরবি। এর অর্থই হলো একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া।
যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবার প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময় একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সেই দিনের যোহরের নামাজের পরিবর্তে এই জুমার নামাজ ফরজরূপে আদায় করেন, সে জন্যই এই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’ বলা হয়ে থাকে।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তারমধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনই হলো জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়, এই দিনে তাকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে ও এই দিনেই তাকে জান্নাত হতে বের করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ মুসলিম : ১৪১০)।
জুমা দিনের গুরুত্ব
বিভিন্ন ইসলামী বই পুস্তক সূ্ত্রে জানা যায়, জুমার দিনের গুরুত্ব অনেক গুণ বেশি। আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনেই। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন ও এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ এবং ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ কিংবা জুমার দিন বলা হয়ে থাকে।
জুমার নামাজ ফরজ করা হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবারের দিনে মদিনা পৌঁছেন ও বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ ধরা হয়।
জুমার দিনের ফজিলত
জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হন, সে যেনো একটি উট কোরবানি করলো, দ্বিতীয় সময় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন সে যেনো একটি গরু কোরবানি করলো, তৃতীয় সময় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো সে যেনো একটি ছাগল কোরবানি করলো। অত:পর চতুর্থ সময় যে ব্যক্তি মসজিদে গেলো সে যেনো একটি মুরগি কোরবানি করলো। অপরদিকে পঞ্চম সময় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো সে যেনো একটি ডিম কোরবানি করলো। অত:পর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে যান খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।’ (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।
১০ দিনের গুনাহ মাফ হয়
জুমার দিনের আদব যারা রক্ষা করেন তাদের ১০ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে পবিত্র হলো অত:পর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইলো, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী এই সাত দিনের সঙ্গে আরও ৩ দিন যোগ করে মোট ১০ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুতবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা কিংবা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করলো সে যেনো অনর্থক কাজ করলো।’ (মুসলিম: ৮৫৭)।
দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা
বলা হয়েছে জুমার সালাত আদায়কারীদের জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা হতে পরবর্তী জুমা, এক রমজান হতে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময় হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে, বান্দা কবিরা গুনাহ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম; ২৩৩)।
জুমার দিনে দোয়া কবুল হয়
জুমার ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই দিনে এমন একটা সময় রয়েছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোওয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোওয়া কবুল করে থাকেন।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় রয়েছে, যে সময় কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলেই, অবশ্যই আল্লাহতাআলা তাঁকে তা দান করবেন। (সহিহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)।
হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর হতে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নিয়মিত জুমার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন- আল্লাহুম্মা আমিন ছুম্মা আমিন।
# লেখক: সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।