ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ রাজধানীতে যানজট যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ঘর থেকে বেরুলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এ অবস্থা চলছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কিন্তু দেখে মনে হয় কারোই কিছু করার নেই।
ফার্মগেট হতে মতিঝিলের যে দুরত্ব তাতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয় কিন্তু এখন সময় লাগে ১ ঘণ্টা বা কখনও কখনও দুই বা তারও বেশি সময়। এভাবে মহাখালী হতে ফার্মগেটের দুরত্ব যা তাতে সময় লাগার কথা ১০ মিনিট। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় মহাখালী হতে ফার্মগেট আসতে ১ ঘণ্টাও লেগে যায় কখনও কখনও। এভাবে ফার্মগেট হতে গাবতলীর যা দুরত্ব তাতে সময় লাগার কথা ২০ থেকে ৩০ মিনিট মাত্র। অথচ ফার্মগেট হতে গাবতলী যেতে ১ ঘণ্টা থেকে শুরু করে কখনও কখনও দেড় ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এভাবে রাজধানী ঢাকার প্রতিটি এলাকায় সারাদিন যানজট লেগেই থাকে। মোহাম্মদপুর থেকে যদি মতিঝিল রওয়ানা দেওয়া যায় তাহলে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বা কখনও কখনও তারও বেশি। অথচ মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যেতে যানজট না থাকলে সময় লাগতো ৩০ মিনিট বা তার কিছু বেশি সময়।
যানজট নিরসনে সরকার কি করছেন?
যানজট নিরসনে বরাবরই সরকারি উদ্যোগ থাকে। সরকার যানজট নিরসনে বড় বা ভিআইপি সড়কগুলোতে রিক্সা চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করেছে। যে কোনো জায়গা দিয়ে ‘ইউ’ টার্ণ করা নিষিদ্ধ করেছে। সিগন্যালিং সিস্টেম আরও কার্যকরী করেছে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা যায় এর কোন সফল কি জনগণ পাচ্ছে? না বাস্তবে এর কোন ফল জনগণ পান না। কারণ সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হচ্ছে অন্তত ২/৩ ঘণ্টা আগে। আবার অফিস করে বাসায় ফিরতেও সময় লাগছে ২/৩ ঘণ্টা। রাতে ঘুম বাদে মানুষের কতটা সময় থাকে একবার ভেবে দেখুন। এর মধ্যে যদি ৫/৬ ঘণ্টা যদি যানজট খেয়ে ফেলে তাহলে মানুষের ঘুম আহার বাদে আরও কিছু নিত্যদিনের কাজ থাকে সেগুলো সারবে কখন?
ফ্লাইওভারের ভূমিকা
যানজট নিরসনে সরকার খিরগাঁও এ একটি মহাখালীতে একটি ফ্লাইওভার করেছে। বাস্তবে এগুলো যানজট নিরসনে কতখানি কাজে আসছে তা ভাববার বিষয়। মহাখালীতে যে ফ্লাইওভার করা হয়েছে তা শুধুই একদিকের জন্য যে কারণে এটি খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। তবে বর্তমানে আরও কয়েকটি ফ্লাইওভারের কাজ চলছে সেগুলো বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। প্রথমত মিরপুরের সঙ্গে এয়ারপোর্ট উত্তরার সংযোগের জন্য ক্যান্টনমেন্টের উপর দিয়ে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি সম্পন্ন হলে মিরপুরের এলাকা থেকে এয়ারপোর্ট-উত্তরার দিয়ে যাতায়াতের জন্য সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত সহজসাধ্য হবে। অপর দিকে খিলক্ষেত থেকে সাইদাবাদ অভিমুখে ফ্লাইওভারের কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। এছাড়াও এয়ারপোর্ট যেতে বনানী পার হয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার স্টাফ রোড রেল ক্রসিং এ রেল লাইন অতিক্রম করার জন্যও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। মূলত এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে কিছু উন্নতি হবে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
গাড়ি বাড়ছে কিন্তু রাস্তা বাড়ছে না
গাড়ি বাড়ছে যে হারে সে হারে সড়ক সংস্কার বা রাস্তাঘাটের কোন উন্নতি ঘটছে না রাজধানীতে। যে কারণে যত দিন গড়াচ্ছে ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৫ বা ১০ বছর পর রাজধানীতে ঘর থেকে বের হয়ে হেটে যেতে হবে কর্মস্থলে। দেশ স্বাধীনের পর সারাদেশে সড়কের যে করুণ অবস্থা ছিল, সে অবস্থার কিন্তু অনেক উন্নতি ঘটেছে। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটলেও রাজধানীতে সে তুলনায় উন্নতি ঘটেনি। কারণ আগে যেসব গ্রামে কাঁদা মাটির পাঁকের মধ্যে মানুষকে গরুর গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হতো, সেখানে এখন পাকা রাস্তা হয়ে গেছে। সেখানে এখন মোটর গাড়ি, রিক্সা-ভ্যান বা ভটভটি চলাচল করে। অথচ স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হলেও একটি দেশের রাজধানীর যে উন্নতি হওয়ার কথা তা ঘটেনি। বরং দিনকে দিন এমন অবস্থায় যাচ্ছে তাতে বিদেশী অতিথিরা এলে অনেক সময় লজ্জায় পড়তে হয়। বিশ্বকাপ খেলার সময় আইসিসির একটি প্রতিনিধি দলকে নারায়নগঞ্জের একটি ভেন্যু দেখতে গিয়ে যানজটে পড়ার কারণে এমনই এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।
শেষ কথা
আমরা কোনো লজ্জায় পড়তে চাইনা। আমরা যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় করতে চাইনা। আমরা মনে করি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে রাজধানীকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যেখানে থাকবে না কোন যানজট, থাকবে না কোন ময়লা আবর্জনার স্তুপ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি সুখি সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রের খেতাব আমরা দেখতে চাই এবং দেখাতে চাই।