দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দই আলাদা। কিন্তু সেই আনন্দ যদি বেদনায় রূপ নেয় তাহলে কি অবস্থা হবে একবার ভাবুন। বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে যে ঈদ করতে যাচ্ছেন যদি আপনার কারণে তারা কোনো বিপদে পড়েন তাহলে?
করোনার এই সময় এমনিতেই বৃদ্ধ বয়ষ্কদের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তারপরও আমরা ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি সেই সব বৃদ্ধদের সঙ্গে যাদের এই মুহূর্তে ঝুঁকি সবথেকে বেশি।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরি ছেড়ে যায় ঠিক এভাবে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে গাদাগাদি করে। এক ফেরিতেই অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে পার হয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো অন্তত তিন হাজার যাত্রী।
এছাড়াও গত কয়েকদিনে অন্তত ১২/১৩টি ফেরিতে পণ্যবোঝাই যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। রাতভর ওই ফেরিগুলোতে পণ্যবোঝাই যানবাহনের সঙ্গে ঘরমুখো হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন বলে জানা যায়।
ফেরি, লঞ্চ এবং স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকার পরও শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো যাত্রীর ঢল এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিজিবি মোতায়েন করেও যেনো মানুষের ঢল সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে আরিচা দৌলতদিয়া রুটেও একই অবস্থা। যাদের হয়তো খুব বেশি প্রয়োজন তারা হয়তো বাড়ি যেতে পারেন। কিন্তু দেখা গেছে অনেকেই পুরো পরিবার বউ-বাচ্চা নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা কম দেখা গেলেও করোনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বহুগুণ।
আমরা বাঙালিরা ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি কালচারে সব সময় এগিয়ে। আমাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধনও অত্যন্ত সুদৃঢ়। কিন্তু করোনার এই সময় আমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্য সদস্যদের কথা চিন্তা করে হলেও একটু অন্তত ভাবতে পারতাম। তাহলে যেমন নিজে উপকৃত হতাম তেমনি দেশ ও জাতিও উপকৃত হতো।
সাধারণ রুটি-রুজির জন্য মানুষ ঘর থেকে বের হন সেটি একেবারেই ভিন্ন কথা। কিন্তু এই সময় ঈদের আমেজে জীবনের ঝুঁকি নেওয়াটা কতোখানি খামখেয়ালিপনা সেটি ভেবে দেখা দরকার। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার যে আনন্দ সেই আনন্দ হয়তো ম্লানও হতে পারে করোনার কারণে। ঈদের আনন্দ যেনো বিষাদে পরিণত না হয়। সেই বিষয়টি আমাদের সকলকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে।
এখনও কিছুটা সময় আছে, যারা এখনও যাননি তারা একবার হলেও বিষয়টি ভেবে দেখুন এবং বুঝে শুনে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। আপনার জন্য আপনার বাবা-মা বা পাড়া প্রতিবেশি কেওই যেনো মাশুল না দেন সেই বিষয়টি বহুবার ভাবুন এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।