দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাল ও পরশু জামায়াতে ইসলামীর হরতাল। এ হরতারকে সামনে রেখে ব্যাপক গুপ্ত হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিচারের রায় জামায়াতের বিপক্ষে যায়। তবে এবার জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে আদালত। যে কারণে এ দলটি রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকলেও তারা জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যে কারণে তাদের সরকারের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। রোজার কারণে কর্মসূচি দেরিতে দিলেও এখন তাদের বিধ্বংসি মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রায় ঘোষণার আগেই জামায়াত ঘোষণা করেছিল, রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলে লাগাতার হরতাল ডাকা হবে। আর এ কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন জামায়াতের হরতালে ব্যাপক সহিংসতা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনলাইন পত্রিকা সূত্র বলেছে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মরণকামড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। এ লক্ষ্যে দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। দুই দিনের হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে জামায়াত-শিবির। চালানো হতে পারে গুপ্ত হামলা। এমনটিই আশঙ্কা করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ওপর নজরদারি চলছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামীকাল মঙ্গল ও বুধবার হরতাল ডেকেছে জামায়াত। হরতালের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরে জামায়াতের আমিরসহ বেশ কয়েকজন শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নাশকতার তথ্য মিলেছে। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হরতালকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের। বিশেষ করে শিবির ক্যাডাররা ছক কষে নাশকতা চালাতে পারে। বরাবরের মতোই তারা পুলিশের পাশাপাশি যানবাহন টার্গেট করে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা শহরে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে তারা। এ ছাড়া রেললাইনের স্লিপার উঠিয়ে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় ঠেকাতে ছদ্মবেশ নিয়ে এক এলাকার ক্যাডাররা অন্য এলাকায় গিয়ে হামলা চালাবে। মেস ও বাসাবাড়ির পাশাপাশি মাদ্রাসায় অবস্থান করবে তারা। তবে যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল রবিবার থেকে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু হয়েছে। হরতালের আগেই পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বলে অনলাইন পত্রিকায় বলা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাট গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য গোপন আস্তানা ও সন্দেহজনক বাসা, মেসে অভিযান চলছে।
র্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান বলেন, হরতালে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। র্যাবের পক্ষ থেকে ঈদের আগে থেকেই ঢাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হরতালেও এটা বহাল থাকবে। পাশাপাশি সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঘিরে গত বছরের নভেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করে জামায়াত। গত ৪ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম হরতাল ডাকে তারা। তারপর নানা কর্মসূচি দিতে থাকে তারা। তবে প্রায় সময়ই সীমাহীন সহিংসতা চালায় স্বাধীনতাবিরোধী এই সংগঠন। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বেধড়ক পেটায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। ঢাকা ও গাইবান্ধায় পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয় তারা। তাদের হামলায় সারা দেশে অনেক পুলিশ মারা যায়। বিভিন্ন স্থানে কেড়ে নেওয়া হয় পুলিশের অস্ত্র। রাজশাহীতে এক পুলিশ কর্মকর্তার মাথা থেঁতলে দেয় শিবিরের ক্যাডাররা। ২৮ ফেব্রুয়ারি দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে কয়েকটি জেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিচারের রায়ের প্রতিবাদে রমজান মাসেও চার দিন হরতাল পালন করে জামায়াত। গত ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এর পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে জামায়াত-শিবির। ওই দিন ১২ ও ১৩ আগস্ট হরতাল ডাকা হয়। পরে হরতালের তারিখ পরিবর্তন করে ১৩ ও ১৪ আগস্ট করা হয়।