দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাম্প্রতিক সময় আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে অ্যামাজন রেইনফরেস্ট। অ্যামাজন বন হতে ফুটবল মাঠের আকারের বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রতি ১ সেকেন্ড সময়ে। কী ঘটবে যদি অ্যামাজন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে?
দাবানল, বন উজাড় এবং উষ্ণায়নের কারণে আমাজনের এই বেহাল অবস্থা। শুধু চলতি বছর ব্রাজিলের বিভিন্ন বনে ৭৪ হাজার বার আগুন লেগে গেছে। পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত অ্যামাজন বর্তমানে পৃথিবী থেকে গায়েব হওয়ার পথে। বিজ্ঞানীরা ভয়াবহ ধারণা দিয়ে বলেছেন যে, অ্যামাজন বন না থাকলে কী ঘটতে পারে?
যদি অ্যামাজন বন না থাকে তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীর ১০ শতাংশ প্রাণীর আবাসস্থল হলো এই অ্যামাজন। এখানে রয়েছে ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, অন্তত ৩ হাজার প্রজাতির মাছ, ৩৭০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়ও রয়েছে এই অ্যামাজনে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বর্তমানে প্রতিদিন ১৩৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও পোকামাকড় এই বন হতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বছরে ৫০ হাজার প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিলুপ্ত হচ্ছে এই বনাঞ্চল হতে। আর এভাবে যদি বন উজাড় হতে থাকে, তাহলে পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় ১১৮ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীসহ পৃথিবীর অর্ধেক প্রজাতিই হারিয়ে যাবে।
এই অ্যামাজনের প্রকৃতি থেকে মানুষের ৯০ শতাংশ অসুখের ওষুধ তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে। অনেক ওষুধ অ্যামাজনের উদ্ভিদ থেকেই তৈরি হয়। আধুনিক মেডিকেল ওয়ার্ল্ড অ্যামাজন রেইনফরেস্টের ওপরেই মূলত নির্ভরশীল। এই রেইনফরেস্ট না থাকলে মানুষকে সুস্থ করে তোলার অনেক ওষুধ তৈরি করা সম্ভবই হবে না। এখন অন্তত ১২১টি রোগের ওষুধ অ্যমাজনের বনের বিভিন্ন উদ্ভিদ হতেই তৈরি হয়ে থাকে। হৃদরোগ, গ্লুকোমা, লিউকেমিয়া, ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ শুধু অ্যামাজনের উদ্ভিদ দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে। এই রেইনফরেস্ট ৮০ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির আবাসস্থল। যেখান থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১ শতাংশ পরীক্ষা করে ওষুধ তৈরির কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে। মারণব্যাধির জন্য ওষুধ তৈরি হতে পারে এই বন থেকেই। সেই সুযোগও থাকবে না যদি এই বনই আর না থাকে।
অ্যামাজন বন ধ্বংস হলে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও কমে যাবে। অনেক বেশি আকারে খরা দেখা দেবে। বন্যাও হবে অনেক বেশি। প্রাণীর এই বিশাল আবাসস্থল ধ্বংসের প্রভাব পড়বে পুরো পৃথিবীজুড়ে। অনেক স্থানে খরা ও বন্যাও দেখা দেবে। অ্যামাজনের কারণে যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, বন উজাড়ের কারণে ইতিমধ্যেই সেসব স্থানে বৃষ্টিপাত কমেও গেছে।
আমরা জানি গাছ ও উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। বছরের পর বছর ধরে এই কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে আসছে অ্যামাজন। যদি কখনও অ্যামাজন না থাকে, তখন কোটি কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হবে। বায়ুমণ্ডলে ধ্বংসাত্মক গ্রিনহাউজ গ্যাস ৫ হতে ৬ গুণ বেড়ে যাবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন যেনো বিদ্যুৎ গতিতে বাড়বে।
বৃষ্টিপাত কমলে ও খরা বাড়লে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে, মানুষ খাওয়ার জন্য পানিও পাবে না, খাদ্যসংকট পৌঁছাবে এক চরমে। বৃষ্টিপাত না হলে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। এমনকি দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ।
এই অ্যামাজন রেইনফরেস্টে বর্তমানে ৩ হাজার রকমের ফল পাওয়া যায়। বিশ্বের ৮০ শতাংশ খাবার তৈরি হয়ে থাকে এই রেইনফরেস্টে। যারমধ্যে রয়েছে অ্যাভোকাডো, কমলা, আঙ্গুর, কলা, আনারস, আম, কফি, নারিকেল, চকোলেট ও টমেটো। অ্যামাজন না থাকলে আশঙ্কাজনকহারে কমে যাবে খাবার সরবরাহ।
বিশ্বের বন্যপ্রাণী সংস্থা বলেছে, অ্যামাজন অন্তত ১০ হাজার কোটি মেট্রিক টন কার্বন শোষণ করে রাখে। যদি এই বন পুড়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে আর কেওই বাঁচাতে পারবে না। কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে থাকলেও অক্সিজেন তৈরি হবে না। এই রেইনফরেস্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত আকারে খরা হবে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে আরও বাড়বে দাবানলের পরিধি।
মূলত এই বন পৃথিবীর ৩ কোটি মানুষের আবাস। যারমধ্যে ২৭ লাখই হলো উপজাতি। ৩৫০টি গোষ্ঠীর জীবন জীবিকা এই অ্যামাজন বনের ওপর নির্ভরশীল। যারা শহরের দিকে থাকেন, তারাও খাবার ও ওষুধের জন্য এই বনের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে আছেন। বন না থাকলে আশ্রয়ের খোঁজে উদ্বাস্তু হয়ে যাবে লাখ লাখ মানুষ।
যদি এই বন ধ্বংস হয় তাহলে বিশুদ্ধ পানির ২০ শতাংশই হারাবে মানুষ। অ্যামাজন নদী পৃথিবীর বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর মধ্যে একটি। প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৭৫ হাজার কিউবিক মিটার বিশুদ্ধ পানি অ্যামাজন নদী হতে আটলান্টিক সমুদ্রে পড়ে। এই পানি এখানকার উদ্ভিদ, প্রাণী, খনিজ পদার্থ ও ছত্রাকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। বৃষ্টিপাত না হলে এই বিশুদ্ধ পানির উৎস আর কখনও থাকবে না।
এই অ্যামাজন বন ধ্বংস হলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ৩ হাজার উদ্ভিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ হারিয়ে যাবে। এই রেইনফরেস্টেই রয়েছে প্রাণঘাতী ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা উদ্ভিদগুলো। পেরিউইঙ্ক্যেল ক্যান্সারের প্রতিষেধকের মধ্যে যা অন্যতম। এই রেইনফরেস্টের ভিনক্রিস্টাইন উদ্ভিদ হতে তৈরি হয় এই ওষুধ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। এই উদ্ভিদও থাকবে না যদি অ্যামাজন বন আর না থাকে। তাই যদি অ্যামাজন বন ধ্বংস হয় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে পুরো মানবজাতির ওপর, যা কারও কাছে কখনও কাম্য হতে পারে না।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।