দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ- এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম ৫ দিনে ছয়জনের মৃত্যু ঘটেছে। সবমিলিয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে এই রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কেও সঠিক ধারণা দরকার।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা ব পরিষদ- বিসিএসআইআর বলেছে যে, রাজধানী ঢাকায় এ বছর ডেঙ্গুর ‘ডেনভি-৩’ ধরণের দাপট চলছে। এই ধরনে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন বেশি, তেমনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বর নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। শুরু থেকেই সতর্ক এবং সচেতন থাকলে মৃত্যুঝুঁকিসহ অন্যান্য জটিলতা কমে যাবে। তাই যে কোনো জ্বরকে আমলে এনে বাড়িতেই ডেঙ্গু রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা দরকার।
ডেঙ্গু উপসর্গ
কোভিড-১৯ কিংবা ডেঙ্গু দুটোই ভাইরাসজনিত জ্বর। দুটোতেই কিছু উপসর্গ প্রায় একইরকম। যেমন- জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি উপসর্গ।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথাও হয়, সেই সঙ্গে চোখের পেছনে ব্যথা, হাড়েও ব্যথা থাকে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, অরুচি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
ডায়েরিয়া কিংবা পেটের ব্যথার সমস্যা এই রোগে হতে পারে। সেজন্য জ্বর ডেঙ্গু না করোনা ভাইরাসের কারণে, সেটি বোঝা অনেক সময় মুশকিল হয়ে যায়। তাই এই সময় জ্বর হলে দুটো পরীক্ষায় করে ফেলতে হবে।
ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটারী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়ে থাকে। এর লক্ষণসমূহ হলো:
# রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
# নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ এবং দ্রুত হওয়া
# হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া
# প্রস্রাব কমে যাওয়া
# হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
করণীয় জেনে নিন
যে কোনো অসুস্থতায় অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়িতেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
# চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু হলে জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা বুঝে তা ব্যবহার করা যাবে। জ্বর কমাতে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও জ্বর কমাতে রোগীর মাথায় পানি ঢালা, ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া বা গোসল করানো যেতে পারে।
# ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান চিকিৎসাই হলো তরল ব্যবস্থাপনা। রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ওরস্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের শরবত, ভাতের মাড়, দুধ ইত্যাদি লিকুইড দেওয়া যেতে পারে।
# ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সময় রোগী শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল থাকে। উপসর্গের ৭ থেকে ১০ দিন ভারি কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম মোটেও করা যাবে না। তবে ডেঙ্গু রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন।
# আবার জ্বরের পাশাপাশি অনেকের বমি বমি ভাব, ডায়রিয়াও থাকে। এইসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধও চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই।
# ডেঙ্গু রোগীর কিছু সতর্কসংকেত জেনে রাখতে হবে এবং এসব উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যতো দ্রুত সম্ভব।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।