দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খুন হওয়া পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী শুধু মাদক সেবন নয়, এক পর্যায়ে ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ে। গতকাল রিমান্ডের ২য় দিনে সে বলেছে তার বন্ধু জনির কাছ থেকেই সে ঘুমের ওষুধ নিয়েছিল।
মাদক ব্যবসা ও বখাটে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রায়ই সে মধ্যরাতে বাসায় ফিরত। পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী এসব তথ্য জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ছিল ঐশীসহ ৩ জনের ৫ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন।
বাবা-মাকে খাওয়ানো ঘুমের ওষুধ কোথা থেকে পেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ঐশী গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, বন্ধু জনিই তাকে এই ওষুধগুলো সরবরাহ করেছে। আগেও অনেকবার জনি তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। দুই- তিনবার বাবা-মাকে সেই ওষুধ খাইয়েছে সে। তাই কোথা থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে তা জনিই বলতে পারবে।
ঐশীকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় সাবধানতার সঙ্গেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মাঝে-মধ্যেই সে নিজের অবস্থান বদল করছে। খুনের ব্যাপারে তথ্য দেয়ার চেয়ে নিজের জীবন-যাপন, বখে যাওয়া নিয়ে তথ্য দিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন ঐশী। কিছুদিন আগে বাসা থেকে রাগ করে বের হওয়ার পর ১৫ দিন বন্ধু জনির এক গার্লফেন্ডের বাসায় অবস্থানের কথা স্বীকার করেছে সে। ওই সময় জনির সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু এভাবে থাকতে তার ভালো না লাগায় বাইরে বাবার সঙ্গে দেখা করে বাসায় ফিরে আসে। সেই থেকে মা-বাবা তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। তার স্বাভাবিক চলাফেরায়ও বাধা দেন তারা। এক পর্যায়ে ৩১ জুলাই ঐশীর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন বাবা-মা। তাই মাকে কফিতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ওই ফোন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলেছে ঐশী। অনেক সময় মা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বাইরে গিয়ে মাদক সেবনের পর ফিরে এসেছে সে। বাবা-মাকে হত্যার আগে যে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল সেগুলোও জনি তাকে সরবরাহ করেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অক্সফোর্ডের নিয়মিত ছাত্রী ছিল না ঐশী। বহিরাগত ছাত্রী হিসেবে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু দুটি পরীক্ষা দিয়ে অন্যগুলো আর দেয়নি। ঐশী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করাকালে ৮ম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ফলে ৯ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালের ৯ জুন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থী হিসেবে ৮ম শ্রেণীতেই ভর্তি হয়। সেখানে ভর্তির কয়েকদিনের মাথায় অক্সফোর্ডের ইয়াবা সেবনকারী গ্রুপের সদস্য বাকিরের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় তার। ধীরে ধীরে তাদের সখ্য বাড়তে থাকে। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এই বাকিরের মাধ্যমেই মরণ নেশা ইয়াবা সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ে সে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে ঐশী। জোটে বহু বন্ধু। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, রিমান্ডে থাকা রনি মূলত ঐশীর ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার বন্ধু। আর জনি ও সাইদুল ড্যান্স পার্টি ও ডিজের বন্ধু। রনির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বিক্রিও করেছে ঐশী। এর ভাগও পেয়েছে। ঐশীর দাবি, রনি তাকে ব্যবসায় ঠকিয়েছে। যদিও এ নিয়ে তার ক্ষোভ নেই। আর জনির সঙ্গে বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে অংশ নিত। মজা করত, কিছু টাকাও আয় করত।
জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, গতকালও জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী তাদের কাছে বাবা-মাকে হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই রকম কথা বলেছে। একবার বলেছে, সে একাই হত্যা করেছে। আরেকবার বলছে, দুই বন্ধু জনি ও সাইদুলই বাবা-মাকে হত্যা করেছে। কিন্তু দুই বন্ধু উপস্থিত থাকার পক্ষে কোন যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত তদন্তে নিশ্চিত যে, হত্যাকাণ্ড ঐশী একাই ঘটিয়েছে। কারণ হত্যাকাণ্ডে একটি চাকু ব্যবহার করা হয়েছে। ওই চাকুতে একজনেরই হাতের ছাপ রয়েছে। ফলে বন্ধুদের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। যখন সে বুঝতে পারছে হত্যাকাণ্ডের পুরো দায় একা স্বীকার করলে বড় ধরনের শাস্তি হতে পারে, তখনই সে বন্ধুদের জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে।
গতকাল ঐশী গোয়েন্দাদের কাছে বার বার মিনতি করেছে, তাকে যেন সংশোধনের জন্য একবারের জন্য সুযোগ দেয়া হয়। সে ভালো জীবনে ফিরে আসতে চায়। এ পর্যন্ত সে যা করেছে তার সবই ভুল ছিল। পাশাপাশি সে এও বলেছে, তার বয়স তো ১৮ বছরের কম, তাই নিশ্চয়ই সে সংশোধনের সুযোগ পাবে।
এদিকে জনি ও সাইদুলকে ঘিরেই এখন রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এই দু’জনকে পাওয়া গেলে সব রহস্য উন্মোচিত হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঐশীর পলাতক দুই বন্ধুর বাড়ি বাসাবো ও মান্ডা এলাকায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু দুই বন্ধুর বিষয়টি সামনে রয়েছে। এই দুই বন্ধু সাইদুল ও জনিকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশু আইনের বিধানকে সামনে রেখে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: অনলাইন পত্রিকা।