ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ রাজধানী ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার পর এই প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সমপ্রতি তফসিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই দুই সিটি কর্পোরেশন নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মত বিরোধ থাকলেও সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারে তা সময়ই বলে দেবে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুয়ায়ী আগামী ২৪ মে (বৃহস্পতিবার) ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ এই দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ এপ্রিল, বাছাই ২২ ও ২৩ এপ্রিল এবং ২ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার বেলা ২টা ৫০ মিনিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ গুরুত্বপূর্ণ দুই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী ও মোঃ শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ ১০ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের ১৪ মে ডিসিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। নানা টানাপোড়েনে গত ৫ বছর এ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর সিইসি এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল এবং সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ইসির সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে এ নির্বাচন অবাধভাবে অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সব দল এবং সরকারের কাছে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ডিসিসি নির্বাচন একটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। এ নির্বাচনে সবাইকে যথাযথভাবে বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করা হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃংখলা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাতে ভোটারদের কোন অসুবিধা না হয়। সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আগেভাগে কিছু বলতে অনীহা প্রকাশ করেন সিইসি। নতুন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম তাদের অধীনে একটি বড় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কাজকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এটা একটা বড় নির্বাচন। আমরা প্রতিটি কাজই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। কোনটাকে ছোট করে দেখছি না। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এটা ম্যানেজ করা বড় ব্যাপার। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। দুই ডিসিসিতে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখ। নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। সিইসি জানান, এই নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। তাকে সহযোগিতা করবেন ১২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। ঢাকা দক্ষিণে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহপরিচালক খোন্দকার মিজানুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করবেন ১৯ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে এই নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর- এই তিনটি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় প্রচার-প্রচারণায় কোন প্রার্থী রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না বলে জানান সিইসি। ডিসিসিতে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নে সিইসি জানান, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
নির্বাচনের দিন এক এলাকার ভোটারদের অন্য এলাকায় যাওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা এ বিষয়ে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি। আমাদের হাতে আরও সময় আছে। আমরা এ বিষয়ে পরে আলোচনা করব।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ ডিসেম্বর ডিসিসি বিভক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ডিসিসির ৯২টি ওয়ার্ডের গেজেট প্রকাশ করা হয় ৫ ডিসেম্বর। আগামী ২৯ মে অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের ভোটার সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ৭২ হাজার ৪২৭ জন। ঢাকা দক্ষিণের ৫৬টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৯ জন। ঢাকা উত্তরে সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি। দক্ষিণে ১৯টি। উত্তরে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র ১ হাজার ৮৪টি। দক্ষিণে ৮৭৩টি। এখন বাকিটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। তারা নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা থাকবে। রাজধানীবাসী অন্তত সেটিই আশা করে।