দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিজ্ঞানীরা মানুষে মানুষে যোগাযোগের এক ভিন্ন মাত্রার সূচনা করেছেন। প্রচলিত ধারার মুখ দিয়ে কথা বলা আর কান দিয়ে শুনে জবাব দেয়ার চির পরিচিত ধারা নয়, বরং মুখ আর কানের কোনো যোগাযোগ ছাড়াই দুটি মানুষের মস্তিষ্কের যোগাযোগ সাধনের কাজে অনেকখানি এগিয়েছেন তারা। এর মাধ্যমে শুধু যোগাযোগই নয়, অন্য মানুষটির শরীরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া সম্ভব।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানী রাজেশ রাও এবং তার সহকর্মী আন্দ্রে স্টকো দাবি করেছেন, তারা প্রথমবারের মতো মানুষে মানুষে মস্তিষ্ক যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। রাজেশ রাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার সহকর্মী আন্দ্রে স্টকোর মস্তিষ্কে একটি বিশেষ তরঙ্গ প্রেরণ করেন, যা নিজ থেকেই আন্দ্রে স্টকোর হাত নাড়িয়ে দেয়। এসময় তরঙ্গ প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য তাদের দুই জনের মাথাতেই ছিলো বিশেষ ধরনের হেলমেট। মানুষে মানুষে যোগাযোগের এই মাধ্যমটি নতুন হলেও প্রায় একই রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষে যন্ত্রে চমৎকার যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে, আর তা থেকে বেশ কিছু কঠিন কাজও সম্পন্ন করা গেছে অনায়াসেই।
মানুষে যন্ত্রে যোগাযোগের মাধ্যমে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে সঙ্গীতক্ষেত্রে। সন্দেহ নেই যে, মিউজিক কম্পোজারের পুরো মিউজিকটি প্রথমে মাথাতেই আসে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের তৈরি করা ‘মিউজিক ইন মিউরাল ডায়মেনশন’ (মাইন্ড) এর সাহায্য কেবলমাত্র ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি হেলমেট এবং একটি কম্পিউটারের সাহায্যে মাথায় আসা মিউজিকটি অনায়াসেই বাজিয়ে ফেলতে পারবে সঙ্গীত নির্মাতারা।
ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের কথা চিন্তা করে যদি ফোন সিদ্ধান্ত নেয় যে এই মুহুর্তে কোন ফোনটি আসা উচিত হবে কিনা, তাহলে কেমন দাঁড়াবে ব্যাপারটা? ইতালির রুগেরো স্কোরসিওনির তৈরি করা একটি অ্যাপলিকেশোন এই কাজটি করবে। ব্যবহারকারীর মাথায় থাকা একটি হেডসেটের মাধ্যমে এটি মস্তিষ্কের চাপ পরিমাপ করবে। চাপ বেশি হলে সরাসরই ব্যবহারকারীকে আর বিরক্ত না করে মুঠোফোনে আসা কলটিকে রেকর্ড করে ভয়েসমেইলে পরিণত করে রাখবে। রুগেরোর এই উপকারী অ্যাপ্লিকেশন এরই মধ্যে ৩০ হাজার ডলারের পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
ধরা যাক, মাথায় বিশেষ ধরনের হেলমেট পরে একটি বিশেষ যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। যেই বস্তুটির কথা ভাবছেন, সেটিই থ্রিডি প্রিন্টার নামের যন্ত্রটি দিয়ে বেরিয়ে এলো! আলাদিনের চেরাগ বা গুপি গাইন বাঘা বাইনের হাঁড়ির মত শোনালেও অনেকটা এ ধাঁচের জিনিসই বানিয়েছেন চিলির জর্জ ল্যাসকাওস্কি। কোনো একটি বস্তু তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়া থাকলে মনে সেই বস্তুর ঠিক যেই ডিজাইনটি ভাবছেন, একেবারে ওই ডিজাইনটিই বেরিয়ে আসে এই থ্রিডি প্রিন্টার নামের যন্ত্রটি দিয়ে, এরই মধ্যে জর্জ ল্যাসকাওস্কির কোম্পানি বাচ্চাদের কয়েকটি স্কুলে থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে তাদের কল্পনায় থাকা দানবের প্রতিলিপি তৈরি করেছেন।
২০০৯ সালে জাপানের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টয়োটা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিকেন প্রথমবারের সফলতার সাথে মস্তিষ্কাচালিত হুইলচেয়ার নির্মানের ঘোষণা দেয়, যা প্রায় ৯৫ শতাংশ নির্ভুল কাজ দিয়েছিল। এর পর থেকে সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কাচালিত গাড়ি ও হুইলচেয়ার তৈরি করেছেন। তবে ‘ব্রেইন ড্রাইভার’ নামের এই প্রযুক্তি এখনো খোলা রাস্তায় চালানোর মতো পরিণত হয়নি।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে ‘বায়োনিক লিম্ব’ নামে মানব মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগক্ষম বিশেষ ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ। সাধারণ কৃত্রিম অঙ্গগুলো সাধারণত মানব দেহে ঠাণ্ডা, গরম, তাপ-চাপের কোনো অনুভূতির সৃষ্টি করে না। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের (ডারপা) তৈরি করা এই বিশেষ ধরনের পেশি কোনো কিছু ধরে রাখার মতো কাজ তো করবেই, এর সঙ্গে জিনিসটি সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক অনুভূতিও তৈরি করবে নিয়ন্ত্রণকারীর মস্তিষ্কে। এর বিপরীত আরেকটি কৃত্রিম অঙ্গও বানিয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগ। এটি মস্তিষ্ক থেকে তরঙ্গ গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী কাজ করবে। সেক্ষেত্রে মূলদেহের সঙ্গে ওই কৃত্রিম অঙ্গের প্রত্যক্ষ সংযোগের কোনো প্রয়োজনই নেই।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক