দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কারাবান্দী অবস্থায় রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি মারা গেছেন গতকাল (১৬ ফেব্রুয়ারি)। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিন এবং তার সরকারকে দায়ী করেছেন দেশটির ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তি এবং পশ্চিমা দেশগুলো।
শান্তিতে নোবেলজয়ী রাশিয়ার নাগরিক দিমিত্রি মুরাতোভ বলেছেন যে, নাভালনিকে বিগত ৩ বছর ধরে নির্যাতন এবং যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, জীবন দিয়ে তিনি নিজের এই সাহসের প্রতিদান দিয়ে গেলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, নাভালনির মৃত্যু রাশিয়ার জনগণের জন্য এক বড় ধাক্কা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন যে, তারা (রুশ কর্তৃপক্ষ) যে গল্পই বলুক না কেনো, রাশিয়াই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
যদিও স্থানীয় কারা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে যে, নাভালনি শুক্রবার হাঁটাহাটি করার পর হঠাৎই অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জ্ঞান হারান। তখন তাৎক্ষণাত জরুরিভাবে চিকিৎসক দলকে ডেকে আনা হয়। তারা নাভালনিকে ফেরানোর সব চেষ্টা করলেও তাতে কোনো ফলই আসেনি। তবে তার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
৪৭ বছর বয়সী নাভালনি গত এক দশক ধরে রাশিয়ায় বিরোধী নেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের একটি কারাগারে বন্দী করে রাখা হয় তাকে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও নাভালনিকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। কারাগার থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতের শুনানিতে তিনি বক্তব্য দেন। সেই সময় তাকে হাস্যোজ্জ্বল এবং মজা করতে দেখা যায়। নাভালনির মা লুদমিলা নাভালনিয়া ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন যে, ‘আমি কোনো সমবেদনা শুনতে চাই না। আমরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে দেখেছিলাম। সে প্রাণবন্ত, সুস্থ এবং সুখী ছিল।’
পুতিনের সমালোচকরা অধিকাংশই রাশিয়া ছেড়ে গেছেন। তবে নাভালনি নিশ্চিত কারাবাস হবে জেনেও জার্মানিতে কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আবারও দেশে ফেরেন। এর আগের বছর আগস্টে তার শরীরে ‘নোভিচোক’ নামে বিষ প্রয়োগ করা হয়।
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাভালনি। পুতিন প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি তুলে ধরেছেন। কোটি কোটি মানুষ তা দেখেন ও হাজার হাজার মানুষ রাজপথেও নেমে এসেছিলেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org