ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক যে সব দুর্যোগ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো আগাম কোন সতর্কতা সংকেত পাওয়া যায় না। ঝড় কিন্বা বৃষ্টি যাই হোক না কেনো আমরা আগাম সতর্ক সংকেত পেয়ে থাকি। যে কারণে সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ভুমিকম্প এমন একটি জিনিস যার কোনো আগাম সতর্কতা পাওয়া সম্ভব হয় না।
আমাদের দেশে ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে এমন মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই ভূমিকম্প রোধে কি কি করণীয় সেদিকে আমরা তেমন একটা আগাতে পারিনি। আমাদের দেশে ভূমিকম্প সম্পর্কে রেডিও-টিভিতে তেমন কোন প্রচার প্রপাগাণ্ডও চালানো হয় না। জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য প্রচার চালানো অতি জরুরি। কিন্তু সেদিকে সরকারি বা বেসরকারি তেমন উদ্যোগ নেই।
সমপ্রতি রাজধানীতে একটি ‘ভূমিকম্পে সহায়ক কমিটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সংগঠনের যিনি আহ্বায়ক তিনি নিজ উদ্যোগে এই কমিটি গঠন করে জনগণকে সচেতন করার প্রয়াস নিয়েছেন। এই কমিটির মূল প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শাহাদাত হোসেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও তিনি পেশাগত না হলেও সাংবাদিকতায় রয়েছেন। গত ১০ এপ্রিল ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর তিনি ভাষাণটেক এলাকায় জন সাধারণের মধ্যে লিফলেট বিলি করেন। যা অত্র এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
আমাদের আলাপ হয় মোঃ শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, নিজ উদ্যোগে ভূমিকম্প সহায়ক কমিটি গঠন করেছেন। প্রচার চালাচ্ছেন জনগণকে সচেতন করার জন্য। তিনি ইতিমধ্যে রাজধানীর ভাষাণটেক এলাকায় রয়েল স্টার স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং অভিভাবকদের সচেতনমূলক সভাও করেছেন। তিনি মনে করেন, বিল্ডিং তৈরির সময় অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তৈরি করতে হবে। এবং ভূমিকম্প হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। যাতে এই ভূমিকম্প হলে আমরা রক্ষা পেতে পারি। তিনি মনে করেন, আমাদের দেশে যেভাবে ভূমিকম্প একের পর এক আঘাত হানছে তাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই সময় থাকতে দেশের নাগরিকদের সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেক বেশি।
গতবছর ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিক্টার স্কেলে ১০০ সেকেন্ডে স্থায়িত্ব মাত্রা ছিল ৬.৯। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের সময় যা করবেন ঃ
কখনও যদি ভূমিকম্পের অনুভূতি হয় তাহলে-
(১) আপনি যদি নীচতলায় থাকেন ভূমিকম্পের সময় যদি একটু সময় পান তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিল্ডিং থেকে দূরে অবস্থান নেবেন। (২) আর যদি বের হওয়ার সময় না পান তাহলে বিল্ডিংয়ের ভিম অথবা সিঁড়ি মজবুত স্থানে অবস্থান নিবেন। সম্ভব হলে মোবাইল সাথে নিবেন। (৩) সম্ভব হলে গ্যাস টিভি বিদ্যুতিক সুইচ ফ্রিজের কানেকশন বন্ধ রাখুন। (৪) যদি ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ে আটকে যান তাহলে জানালা অথবা খোলা জায়গা দিয়ে বাহির হওয়ার চেষ্টা করুন। (৫) শিশু এবং বৃদ্ধ যারা আটকা পড়ুক তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করুন। (৬) ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উত্তেজিত না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা ও মনোবল দৃঢ় রাখুন।
ভূমিকম্পের পর করণীয়ঃ
(১) যারা সুস্থ্য থাকেন তারা আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেবেন প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। (২) নিরাপত্তা ও সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। (৩) আতংকিত না হয়ে নিজের মনোবল বাড়াতে হবে এবং সম্ভব হলে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে হবে।
সৌজন্যে ঃ ভূমিকম্পে সহায়ক কমিটি (ভুসক) মোবাঃ ০১৭১২৩৮১১২৮