দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকেই সকালে উঠেই খালি পেটে চা খান। তবে এতে শরীরের লাভ হয় নাকি ক্ষতি? সেই উত্তরটা দিয়েছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ। তাই ঝটপট এর মতামত জেনে নিন।
আমরা চা খেতে পছন্দ করি। তাই সকালে ঘুম ভেঙে ওঠেই আমরা চা পান করি। এরপর চোখ থেকে কেটে যায় ঘুমের রেশ। পাওয়া যাবে অফুরন্ত এনার্জি। এই রুটিনের যদি অন্যথা ঘটে, তাহলে ঘুম কাটতেই চায় না। মনে ভিড় করে এক বিস্বাদ। কোনও কাজেও মন বসে না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতিদিন সকালে এভাবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু করা কী আদৌ ঠিক? নাকি এই ভুলটা করলে আদতে শরীরের হাল বিগড়ে যেতে পারে? সেই উত্তরটা জানতে কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়।
অত্যন্ত উপকারী পানীয়
অতি পরিচিত চা’য়ে রয়েছে উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যে কারণে চা খেলে শরীরে প্রদাহ কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, এতে মজুত থিয়াফ্ল্যাভিনসের গুণেই কমে কোলেস্টেরল। যার দরুন দূরে থাকে হার্টের মতো অসুখ। সেইসঙ্গে স্ট্রোকের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কাও তখন কমে। তবে এতেই শেষ নয়, কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত চা পান করলে ক্যান্সার প্রতিরোধে এগিয়ে থাকা যাবে। সেইসঙ্গে এতে মজুত ক্যাটেচিনসের গুণে কমে যায় ওজন। সেইসঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে ইমিউনিটিও। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত চা পান করতে হবে।
খালি পেটে চা খাওয়া কী উচিত?
এই প্রশ্নের উত্তরে মীনাক্ষী মজুমদার বলেছেন, ‘এক কাপ চায়ে দিন শুরু করাটা আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। তাতে তেমন একটা ক্ষতির কিছুই নেই। তবে সকালে খালি পেটে চা খাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানি অবশ্যই পান করুন। তার কিছুক্ষণ বাদে এই পানীয়তে চুমুক দিতে পারেন। চা খালি পেটে খেতে হলে এর সঙ্গে বিস্কুট থাকা জরুরি। তাহলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না।’
লিকার নাকি দুধ চা খাবেন?
লিকার চা ও দুধ চায়ের মধ্যে যদি তুলনা করা যায়, সেই ক্ষেত্রে ব্ল্যাক টি’কেই এগিয়ে রাখতে হবে। কারণ হলো, চায়ের মধ্যে দুধ মেশালে তার পুষ্টিগুণ সামান্য হলেও নষ্ট হবে। তাই চেষ্টা করুন দুধ চা এড়িয়ে চলার জন্য।
চিনি না মেশানোই ভালো
চা’য়ে চিনি মেশালে তার ক্যালোরি ভ্যালু অনেকটা বেড়ে যায়। যার দরুন বাড়তে পারে ওজনও। শুধু তা-ই নয়, চিনি মেশানো চা খেলে দেহে প্রদাহ বাড়ে অনেক সময়। সেই কারণে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে হাই কোলেস্টেরলসহ একাধিক জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই চেষ্টা করতে হবে যেনো তেনো প্রকারে চিনি ছাড়া চা পান করার।
দিনে কতো কাপ চা খাবেন?
একজন সুস্থ মানুষ ২ হতে ৩ কাপের মতো চা খেতেই পারেন। তবে এর থেকে বেশি খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এই ভুলটা করলে চা’য়ে উপস্থিত ট্যানিন শরীরে বেশি পরিমাণে পৌঁছে যেকে পারে। যার দরুন অনিদ্রা, উৎকণ্ঠা এবং দুশ্চিন্তার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org