দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণতভাবে দেখা যায়, বেশিরভাগ মহিলা রক্তাল্পতার ঝুঁকিতেই ভোগেন। পিরিয়ডের সময় অত্যাধিক পরিমাণে রক্তপাত হলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এই সময় খাবারই আসলে ওষুধ। সঠিক ডায়েট মেনে চললে এই সময় সুস্থ থাকতে পারবেন অনায়াসে।
এই সময় কী কারণে এমন হয়
# পিরিয়ডের সময় অত্যাধিক রক্তপাত হওয়া মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতাও অন্যতম কারণ
# পিরিয়ডের সমস্যা শারীরিক সমস্যা দূর করতে ও রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমাতে ভরসা ডায়েট
# সুষম আহার এবং পুষ্টিকর খাবারই মহিলাদের দেহের একাধিক সমস্যা দূর করতে পারে
পিরিয়ডকালীন কী ধরনের খাবার খেতে হবে?
সাধারণত মহিলাদের মধ্যে খুব কমন সমস্যা অ্যানিমিয়া কিংবা রক্তাল্পতা। পিরিয়ডের দিনগুলোয় এই সমস্যা যেনো আরও জোরাল হয়ে ওঠে। ভারি রক্তপাত হলে আর কথায় নেই। সারাদিনের কাজকর্ম পণ্ড হয়ে যায়। ঋতুস্রাব চলাকালীন অত্যাধিক রক্তপাত হলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। এর জেরে শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতাও বাড়তে থাকে। আয়রণের ঘাটতি মেটাতে ও শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ডায়েটই একমাত্র ভরসা। পিরিয়ডের সময় কোন ধরনের ডায়েট মেনে চলবেন ও কী-কী খাবার অবশ্যই খাবেন, সেই টিপস দিয়েছেন পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে।
পিরিয়ডের সময় সঠিক ডায়েট গুরুত্বপূর্ণ
পিরিয়ডের সময় অনেক মহিলা তলপেটে ব্যথা কিংবা ক্র্যাম্প, ফোলাভাব, ক্লান্তি, মুড সুইংয়ের মতো নানা সমস্যার মুখোমুখিও হন। এই সময় খাবারই তখন একমাত্র সমাধান। পুষ্টিকর এবং সুষম আহার ঋতুস্রাব চলাকালীন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে। সেইসঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ও রক্তাল্পতার ঝুঁকি এড়াতেও সাহায্য করে।
পিরিয়ডের সময় মহিলাদের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয়। দেহে হরমোনের তারতম্য বজায় রাখার জন্যও সঠিক খাবার খাওয়াটা জরুরি। সুষম আহারের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সমস্ত ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকাটা জরুরি। এর জন্য কোন কোন খাবার অবশ্যই খাবেন, সেটি দেখে নিন।
সবুজ শাক
পালং শাক, কলমি শাক এবং কুলেখাড়া পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকে, যা ক্লান্তি মোকাবিলা করতে ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
আদা
প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য আদার জুড়ি নেই। আদা ঋতুস্রাবের সময় হওয়া শারীরিক ব্যথাও কমাতে পারে।
হলুদ
এই মশলায় রয়েছে কারকিউমিন, যা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে পারে।
ব্রকোলি
ফাইবার এবং ভিটামিন রয়েছে যা হজমের সমস্যা ও ফোলাভাবও কমাতে পারে।
বাদাম
বাদাম, আখরোট ও কাজু দেহে ম্যাগনেশিয়াম সরবরাহ করে থাকে, যা ক্র্যাম্প উপশমেও সাহায্য করে।
বেরি
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরির মতো ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধও। বেরি জাতীয় ফল প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সহায়তা করে।
কমলালেবু
কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি দেহে আয়রণ শোষণেও সাহায্য করে। কমলালেবু দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ায় ও রক্তাল্পতার ঝুঁকিও কমায়।
দানাশস্য
ওটস, ডালিয়া, ব্রাউন রাইস ও কুইনোর মতো দানাশস্য দেহে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
দই
দইতে থাকা প্রোবায়োটিকগুলো হজমের সমস্যা দূর করে থাকে। সেইসঙ্গে এই খাবার ফোলাভাব কমাতেও পারে।
পানি
পানি প্রতিরোধ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
পিরিয়ড চলাকালীন যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
ক্যাফেইন
এটি উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে ও পিরিয়ডের সময় ক্র্যাম্প বাড়াতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার
উচ্চ সোডিয়াম এবং চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো ঋতুস্রাব চলাকালীন শারীরিক সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
চর্বিযুক্ত খাবার
ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার প্রদাহ এবং অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। চর্বিযুক্ত খাবার বেশি করে খেলে শারীরিক অস্বস্তি এবং ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
রেড মিট
উচ্চ চর্বিযুক্ত মাংস মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটি প্রদাহ আরও বাড়াতে পারে। সেইসঙ্গে একাধিক রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই এই সময় এইসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org