দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণ শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অস্থিরতার মতো নানা সমস্যার শুরু হয়। বিশেষ করে মহিলাদের বয়স ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেই কয়েকটি ভিটামিন নিয়ম করে খেতে হবে।
শরীর সুস্থ রাখতে অন্ততপক্ষে ১৩টি ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এক একটি ভিটামিনের কার্যকারিতা এক এক রকম। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অস্থিরতার মতো সমস্যাও শুরু হয়। বিশেষ করে মহিলাদের বয়স ২৫ বছর পেরিয়ে গেলে কয়েকটি ভিটামিন নিয়ম করে খেতে হবে। প্রতিদিনের খাওয়াদাওয়া থেকেই ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করলে সেটিই সবচেয়ে ভালো। তবে এখনকার যা খাদ্যাভ্যাস, তাতে করে ভিটামিন তো বটেই, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলোরও ঘাটতি দেখা দেয়। সে কারণে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট বা বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার অভ্যাস ইদানিং বাড়ছে। তবে চিকিৎসকরা বলেন, প্রতিদিনের খাওয়াদাওয়া এমন হতে হবে, যাতে সেখান থেকে ভিটামিনের চাহিদা মিটে যেতে পারে।
কী কী ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি?
ভিটামিন বি১২
এই ভিটামিনের অভাবে একজন মানুষের মানসিক অবসাদ গ্রাস করতে পারে। এই ভিটামিনের অভাব হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্তও হয়। আর তখন ত্বক বিবর্ণ হতে শুরু করে। নিরামিষ খাবারে এই ভিটামিনের পরিমাণ কিছুটা কমও থাকে। প্রাণিজ খাবারে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে। ডিম, মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের মাংস এবং মেটে, সামুদ্রিক মাছের মতো খাবারই ভিটামিন বি১২-এর সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও দুধ, দই, ছানাতেও ভিটামিন বি১২ রয়েছে।
ভিটামিন সি
অনেকের জানা নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়, ঔজ্জ্বল্যও বাড়ে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভিটামিন সি’র ভূমিকা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে ভিটামিন সি। লেবু, আমলকি ছাড়াও পেয়ারা, ব্রকোলি, স্ট্রবেরি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টম্যাটো, পালং শাকে থাকে এই ভিটামিন সি। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় টাটকা সব্জি, ফল রাখলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি পাবে।
ভিটামিন কে
হাড় ভেঙে যাওয়া কিংবা হাড়ের ঘনত্ব কম হওয়ার পিছনেও ভিটামিন কে’র অভাব রয়েছে। কারণ ভিটামিন কে হাড় শক্তিশালী করতেও সহায়তা করে। শরীরে ভিটামিন কে’র পরিমাণ কম হয়ে গেলে গাঁটে গাঁটে ব্যথাও হতে পারে। মহিলাদের, বিশেষ করে এই ভিটামিন খেতে হবেই, ঘাটতি হলে অস্টিয়োপোরেসিসের আশঙ্কাও বাড়বে। ব্রকোলি, পালং শাক, বরবটি ভিটামিন কে’র ভালো উৎস। দুগ্ধজাত খাবার এবং ডিম খেলেও এই ভিটামিনের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। মুরগির মাংস ও সয়াবিনেও ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন কে বিদ্যমান।
ভিটামিন ই
হাড়ের যত্ন নিতে, বন্ধ্যাত্বের সমস্যা রোধ করতে, বার্ধক্যজনিত সমস্যা রুখে দিতে পারে এই ভিটামিন ই। ত্বকের এবং চুলের যত্নে অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের খাবার থেকেই ভিটামিন ই’র চাহিদা মিটতে পারে। সাপ্লিমেন্টের কোনো দরকার নেই। যেমন- পালং শাক, অ্যাভোকাডো, কাঠবাদাম, চিনেবাদামে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন ই।
ভিটামিন ডি
মানবদেহের হাড় শক্তিশালী করতে ও পেশির যত্ন নিতে ভিটামিন ডি অপরিহার্য। শুধু হাড় মজবুত করতে নয়, অস্থিসংক্রান্ত নানা রোগ, অস্টিয়োপোরেসিস-এর মতো রোগের ঝুঁকিও কমায়। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধেও ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের কুসুমেও ভিটামিন ডি থাকে। তবে ডিমের খোলায় ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে। দুধ এবং দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারেই ভিটামিন ডি ভালো পরিমাণে থাকে। মাংসের মেটে, বা মাছের ডিমেও ভিটামিন ডি থাকে। আবার মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুমের স্যুপ খেলে উপকার পেতে পারেন। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org