দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রণ বিষয়ে চিকিৎসকরা মনে করেন, অ্যাডাল্ট অ্যাকনির নেপথ্যে মূল কারণ লাইফস্টাইল পরিবর্তনের জেরেই ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
কৈশোরে যখন সৌন্দর্য চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন লিঙ্গ নির্বিশেষে, তখনই তাতে যেনো খানিকটা পানি ঢেলে দেয় অত্যন্ত কমন একটি অসুখ। অনেকাংশেই মুখাবয়বের লালিত্য ধাক্কা খায় সেই ত্বকরোগে। যার নেপথ্যে থাকে এই হরমোনের তারতম্য। চিকিৎসা পরিভাষায় সেই রোগের নাম অ্যাকনি ভালগারিস। চলতি কথায় যাকে বলে, ব্রণ। যথাযথ চিকিৎসায় তা অবশ্য সেরেও যায় সহজেই।
তাহলে বড় বয়সে কেনো ব্রণ হয়?
সেই অ্যাডাল্ট অনসেট অফ অ্যাকনি (এওএ) আবার সারতেও চায় না খুব সহজে। চিকিৎসকরা মনে করেন যে, এর নেপথ্যে মূল কারণ লাইফস্টাইল পরিবর্তনের জেরে ওজন বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
এখন সেই ধারণাকেই সিলমোহর দিলো ভারতীয় একটি গবেষণা। কলিঙ্গ ইনস্টিটউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে হওয়া ওই গবেষণাটি বিখ্যাত বিজ্ঞানপত্রিকা প্রকাশনা সংস্থা ‘স্প্রিঙ্গার নেচার গ্রুপ’-এর ‘কিউরিয়াস’ জার্নালে প্রবন্ধ আকারে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ কিংবা অ্যাকনি ঝামেলা পাকায়নি, এমন কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা বিরল। কারও সাবালকত্ব প্রাপ্তির পরই ধীরে ধীরে সেই সমস্যা গায়েব হয়ে যায়। কারওবা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তা মিলিয়েও যায়।
তবে ইদানিং দেখা যায়, বড়দেরও অ্যাকনি বা ব্রণ হচ্ছে। কারও বা বয়স ২৫ বছর পেরোনোর পরেও, কারও আবার ৩০ বা ৪০ বছর পেরোনোর পরেও। শত চেষ্টাতেও মুক্তি মেলে না গোটা মুখমণ্ডল বা গালের (২৭%) বদলে থুতনি এবং চোয়ালের নীচে বেরোনো (৪৭%) সেই ব্রণগুলো থেকে। গবেষণাপত্রটিতে তুলে ধরা হয় যে, এদের মধ্যে আবার অধিকাংশেরই একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি কমন- আর তাহলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন।
১১২ জন রোগীর উপর সমীক্ষা হওয়া গবেষণাপত্রটির দাবি হলো, যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি, তাদের মধ্যেও অ্যাডাল্ট অ্যাকনি বা ব্রণ বেশি দেখা গিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বেশি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ী জানিয়েছেন, এই গবেষণার ফলাফল তাদের প্রতিদিনকার ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতার সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই গোষ্ঠীর মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যাডাল্ট অনসেট অফ অ্যাকনি। এদের মধ্যে যাদের ওজন অত্যাধিক বেশি, গায়ে বেশি লোম অথচ চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাশয়ে সিস্ট থাকা বা অনিয়মিত ঋতুচক্র, তাদের ক্ষেত্রেই সবথেকে বেশি দেখা যায় বড় বয়সের ব্রণ।’
সহমত পোষণ করেছেন আরেক ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ সুরজিৎ গরাই। তিনি বলেন যে, ‘ওজন অত্যাধিক বেশি হলে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। এর জেরে হরমোনের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তার নানা উপসর্গ ফুটে ওঠে শরীরের মধ্যে। যৌবনে বা মধ্যবয়সে মুখে ব্রণ হওয়ার অন্যতম বড় কারণই হলো এটি।
চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে যে, একটু বড় বয়স পর্যন্ত ব্রণ না-সারা বা বড় বয়সে নতুন করে ব্রণের সমস্যা জন্ম নেওয়ার ঘটনা কখনও আগে দেখ্ই যেতো না, এমনটি নয়। সংখ্যায় কম হলেও তা বরাবারই দেখা যেতো। তবে গত এক-দেড় দশকে সেই সমস্যাটা বেড়ে গেছে বহু গুণে। লাইফস্টাইল সংক্রান্ত সমস্যা ও বেশ ওজনের ঝঞ্ঝাটের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের পরামর্শ হলো, ফাস্টফুড ওএবং জাঙ্কফুডের পাশাপাশি চিনি এবং ময়দা জাতীয় খাবারও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি করে খেতে হবে পানি, শাকসবজি এবং ফল। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুটা ব্যায়ামও করতে হবে। সেটি হলে ওবেসিটি কিংবা স্থূলত্ব থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে অনেকাংশে। এতে বড় বয়সে ব্রণও এড়ানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ জীবনশৈলির পরিবর্তনই হলো সমাধানের আসল চাবিকাঠি। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org