দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি জন্মের পর থেকেই সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষটি হলেন তার মা। সেই মা-ই যদি হন সন্তানের প্রিয় বন্ধু, তাহলে তো বিশ্বটা আরও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।

তবে অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই যে, ভারতীয় সমাজে মা ও সন্তানের মধ্যে খোলামেলা সম্পর্কের অভাবটা আজও চোখে পড়ে। এর জন্য হয়তো কেওই দায়ী নন। হয়তো পরিবেশ ও পরিস্থিতি উভয়ের বন্ধুত্বের মধ্যেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে মায়েরা যদি প্রথম থেকে শাসনের পাশাপাশি সন্তানের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা বদলও ঘটতে পারে।
ছোটো থেকেই যেনো বন্ধু
সন্তানের জন্মের পর থেকে তার সঙ্গে সময় কাটানো দরকার। হাজার কাজের মধ্যেও সন্তানের সঙ্গে কথা বলা, গল্প করার অভ্যাস অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। উভয়ে একসঙ্গে খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা, একে অন্যের খোঁজ নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করা ছোট হতেই জরুরি। তারপর সন্তানের স্কুল, মায়ের অফিস ও অন্যান্য কাজের অভিজ্ঞতা একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে।
গোপন কথা বলা
সন্তান যখন বড় হতে শুরু করবে, তার মনে কিন্তু তখন অনেক প্রশ্ন জাগবে। এমনকী কিশোর বয়সের সন্তানের নানা ব্যক্তিগত বিষয়ে কৌতুহলও বেশি থাকে। তার প্রশ্নের সাবলীলভাবেই জবাব দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সেইসব জবাবের মধ্যেই জীবনে চলার পথে কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল তাও শিখিয়ে দেওয়া জরুরি।
বন্ধুত্ব মানেই জ্ঞান দেওয়া নয়
সন্তানের ভুলগুলো জানতে পারলে সেগুলো গল্পের ছলে শুধরে দেওয়ার চেষ্টাও করুন। মায়ের সম্পর্ক সাবলীল থাকলে যে কোনও বয়সের সন্তান নিজের মনের সমস্ত কথা শেয়ারও করবে। সন্তানকে প্রতিটি কাজেই বাধা না দিয়ে, সেই কাজের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে সরাসরি আলোচনা করুন। তাতেই লাভ হবে বেশি।
ঠিক ভুল শেখাতে হবে
তাই বলে বেশি বন্ধু হতে গিয়ে শাসন করা একেবারেই ছেড়ে দিলে চলবে না। সন্তান ভুল পথে যাচ্ছে দেখেও চুপ থাকলে মোটেও চলবে না। সন্তানকে অবশ্যই ঠিক-ভুল শেখান, তবে বন্ধুর মতো বুঝিয়ে কিংবা গল্পের ছলে করুন- শাসন করে নয়।
ভালো ও খারাপ স্পর্শ
ছেলে হোক কিংবা মেয়েই হোক, সন্তান ছোট থেকেই খারাপ স্পর্শ ও ভালো স্পর্শ সম্পর্কেও শেখান। বাচ্চাকে শিখিয়ে দিন খারাপ স্পর্শ বোঝার পর ঠিক কী-কী করা দরকার।
বেড়াতে যান
ছুটি বা সপ্তাহান্তে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাছেপিঠে ঘুরে আসতে পারেন। গবেষণা বলছে যে, বাড়িতে একসঙ্গে থাকার চেয়ে, বেড়াতে গিয়ে সময় কাটালে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হতে পারে। বেড়াতে গেলে সকলের মনই ভালো থাকে। তখন গল্পের ছলে অনেক কথা বেরিয়ে আসে- যা বাড়িতে থাকলেও বলা হয় না। সন্তান যদি বন্ধুবান্ধব কিংবা স্কুল-কলেজ নিয়ে চাপে থাকে, তাহলে তার কথাও শুনুন। মনে রাখবেন মনের কথা বলতে না পেরে অনেকেই কিন্তু ডিপ্রেশনে চলে যায়।
নিজের কথা শেয়ার করুন
শুধু যে কথা শুনবেন তা-ই নয়, নিজের কথাও সন্তানের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। নিজের রোজকার সমস্যা, অফিসের কাজের নানা চাপ, ঘরের দায়িত্ব, জীবনের ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা, ব্যর্থতা বা প্রাপ্তি নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। দেখবেন সেও ধীরে ধীরে আপনার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org