দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভয়ংকর অনেক কিছুর কথা শুনলেও এবার আমরা শুনেছি এক ভয়ংকর মানুষখেকো গুহার কথা। সেই ভয়ংকর গুহার কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
এক অবিশ্বাস্য বা আশ্চর্যজনক হলেও এটি সত্যি।এমনই একটি গুহা আছে যেটি মানুষখেকো গুহা নামে পরিচিত। গুহা কি মানুষ খেতে পারে আমরা যে গুহার কথা বলছি সেটাতে শুধু মানুষ নয়, যে কোনো জীব এই গুহার মধ্যে ঢুকলেই আর জীবিত বেরিয়ে আসা তার পক্ষে এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। তথ্য: অনলাইন পত্রিকা সূত্রের।
এটি গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবোর মতে প্রাচীন গ্রিক শহর হিয়ারাপোলিসে ছিল অ্যাপোলো দেবতার একটি মন্দির। মন্দিরটি একসময় নানা কারণে রহস্যময় মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। এ মন্দিরের পাশেই ছিল একটি গুহা। এ গুহার বৈশিষ্ট্য ছিল, ভেতরে কোনো জন্তু-জানোয়ার ছুঁড়ে দিলে তা আর ফিরে আসত না। এমনকি কোনো মানুষও যদি এই গুহার প্রবেশমুখ সামান্যও অতিক্রম করত তাহলে সেও আর ফিরে আসত না। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পুরোহিতরা এ গুহার ভেতরে নিরাপদে ঢুকতে পারতেন আবার বের হয়েও আসতে পারতেন। তবে পুরোহিতরা যখন বেরিয়ে আসতেন তখন তাদের মুখমণ্ডল ফুলে যেত এবং রক্তাক্ত হয়ে যেত।
প্রাচীন গ্রিকবাসীদের বিশ্বাস ছিল এই গুহা হল পরলোকে যাওয়ার পথ এবং সেখানে রাজত্ব করে অপদেবতারা। সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা সেখানে গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে ফিরে আসতে পারেন সে কারণেই।
২০০০ বছর আগে স্ট্রাবো এ তথ্যটি তার পুঁথিতে লিখেছিলেন। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের মানুষ ভূত, প্রেত বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানেও এদের কোনো বাস্তবতা এবং স্থান নেই। তাহলে কি সেখানে কোনো অপদেবতা ছিল না? না থাকলে সেখানে মানুষ, জীব-জন্তুদের মেরে ফেলত কারা তাহলে কি ওই গুহাটি নিজেই মানুষখেকো গুহা!
স্ট্রাবোর পুঁথির সূত্র ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ওই গুহার নিচ থেকে প্রাকৃতিকভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হত। ফলে কোনো মানুষ বা জীবজন্তু গুহার ভেতরে প্রবেশ করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যেত। তাহলে এখন প্রশ্ন, পুরোহিতরা ভেতরে ঢুকলে মারা যেতেন না কেন?
এ বিষয়ে শেলডেন বলেন, পুরোহিতরা বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতেন সেজন্য তারা এই গুহার ভেতরে ঢুকে দম বন্ধ করে থাকতেন। বাইরে এসে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার মহিমা প্রচার করতেন। তারা যখন গুহার বাইরে আসতেন তখন তাদের মুখমণ্ডল গ্যাসের চাপে ফোলা ও রক্তাক্ত থাকত বলে তিনি মনে করেন।
প্রাচীন এ গ্রিক শহরটি বর্তমানে পশ্চিম তুরস্কের পাজুক্কাল শহরে অবস্থিত। সেখানে আছে প্রচুর উষ্ণ প্রসবণ। তার মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এ থেকে উৎপন্ন হয় প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। বাষ্প ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোনো ফাটল দিয়ে ঢুকে যায় গুহার ভেতরে। আর তাই ভেতরে কয়েক পা গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু।
অ্যাপোলোর মন্দিরের সেই রহস্যময় গুহাটি আজও আছে। কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার একদল ছাত্র কৌতূহলী হয়ে ওই গুহার ভেতরে ঢুকেছিল পরীক্ষার জন্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, তারা আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তুর্কি সরকার গুহামুখে লোহার পাত বসিয়ে দিয়েছে । যাতে আর কেও এই গুহার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এসব কাহিনী শুনে এখন আর কেও এই গুহার ভেতরে যেতে চান না। এমনসব পরিস্থিতির কারণে এই গুহাটিকে সবাই একটি ভয়ংকর মানুষখেকো গুহা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই বলে আপনি আবার এই ভয়ংকর গুহাটি স্বচোক্ষে দেখার চিন্তা কখনও মাথায় আনবেন না।