দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণত গর্ভধারণের সময় হবু মায়েদের ওজন অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার সন্তান প্রসবের পর অনেকের ধীরে ধীরে সেই ওজন প্রাকৃতিক কারণেই কমেও যায়। তবে বেশির ভাগ মহিলা আবার সন্তান জন্মের পর শারীরিক পরিবর্তনও বেশ চোখে পড়ে।

বিশেষ করে পেটের চর্বি বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা, অতিরিক্ত দৈহিক ওজন বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের কারণও হয়। সিজ়ারিয়ান ডেলিভারির পর ওজন কমানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে পড়ে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হয় পেটের চর্বি কমানোর বিষয়টি। তবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক ডায়েট, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভব।
গর্ভধারণের পর শারীরিক যেসব পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের (বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন) তারতম্যও ঘটে। যে কারণে শরীরে মেদ জমে। এ ছাড়াও শরীরে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি হ্রাস পায় বলে চর্বি জমে। গর্ভাবস্থায় পেটের আকার স্বাভাবিকভাবে অনেকখানি বেড়ে যায়। গর্ভের শিশুকে জায়গা দেওয়ার জন্য পেটের পেশি এবং চামড়াও অনেক প্রসারিত হয়। যে কারণে ডেলিভারির পরও মায়ের পেটের আকার বড় থেকেই যায়। মেটাবলিজম কমে যাওয়ায় ওজন কমানোর গতিও তখন ধীর হয়ে যায়।
সিজ়ারিয়ান ডেলিভারির পরও পেটের চর্বি অনায়াসে কমিয়ে ফেলা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চা।
শিশুকে স্তন্যপান
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো ওজন কমানোর একটি কার্যকর ও সহজ উপায়। কারণ স্তন্যপান করানোর কারণে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। এটি অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে গর্ভাশয় সংকোচন করতেও সাহায্য করে, যে কারণে পেটের আকার দ্রুতই ছোটো হয়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ওজন কমানোর জন্য পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার খাওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য তালিকায় রাখতে হয় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। প্রতি বেলার খাবারে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, চিকেন, ডিম, ডাল, ছোলা, বাদাম, দুধ, দই ইত্যাদি। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পেশির গঠনেও সাহায্য করে ও দীর্ঘ সময় পেটও ভরিয়ে রাখে। শরীরে অনেকক্ষণ এনার্জিও থাকে, আবার ক্লান্তি দূর হয়, শরীরের ক্ষয়পূরণে সহায়ক ও ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী।
অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রেখে খিদে নিয়ন্ত্রণ ও এনার্জি সাপ্লাই-এর জন্য খাদ্য তালিকায় থাকা প্রয়োজন ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া। তালিকায় রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণ মৌসুমি শাকসবজি, টাটকা ও কম মিষ্টি জাতীয় ফল, পরিমিত পরিমাণে গোটা শস্য, যেমন- লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস্, মিষ্টি আলু, ভুট্টা ইত্যাদি।
অপরদিকে খাদ্যলিকায় রাখতে হবে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এটি খিদে ও মেদ উভয় কমাতেই ভিষণ উপকারী। পাতে রাখুন ইলিশ, ট্যাংরা, কই, পুঁটি, পাবদার মতো প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ। রান্নায় ব্যবহার করুন সরষের তেল, অলিভ অয়েল বা খাঁটি ঘি।
প্রচুর পানি খেতে হবে
প্রতিদিন অন্তত ৩ লিটার পানি খান। সেইসঙ্গে দুধ, শরবত, লেবুর পানি, গ্রিন টি ইত্যাদিও খেতে পারেন।
বাদ দিতে হবে
খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন বেশি ক্যালোরি, চিনি, লবণ এবং কেমিক্যালযুক্ত খাবার, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, চিনিযুক্ত পানীয়, মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ফ্রোজেন খাবার ইত্যাদি।
শরীরচর্চা
এই অবস্থায় শরীরকে দ্রুত ফিট করে তুলতে হলে শক্তি এবং মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে শরীরচর্চা করতে হবে। তবে ডেলিভারির পর প্রথম ৬ সপ্তাহ দৌড়ঝাঁপ কিংবা ভারি ব্যায়াম করা যাবে না। এর পরিবর্তে, হাঁটাহাঁটি, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে যোগাসন ইত্যাদি করা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ তখন বেড়ে যায়, যে কারণে পেটে চর্বি বাড়তে থাকে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমও প্রয়োজন। মেডিটেশন ও শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে, প্রসব-পরবর্তী মানসিক চাপও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
অ্যাবডোমিনাল বেল্ট ব্যবহার
এই সময় চিকিৎসকরা অনেক মহিলাকে বেল্ট ব্যবহারের পরামর্শও দেন। এটি পেটের মাংসপেশিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে থাকে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org