দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্বে অনেক কিছুই বদলে গেছে। যেমন সময়ের আগেই ঋতুময়ী হয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সন্তানের প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার পর কী কী বিষয়ে বোঝাবেন তাকে? আজ সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের অধীনে মুম্বইয়ের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ ইন রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ জানিয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময় ৮ বছরের পূর্বেই মেয়েদের মধ্যে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। একে বলা হচ্ছে, ‘আর্লি পিউবারটি’। তবে বয়স ৮ হোক কিংবা ১২ হোক, প্রথম ঋতুস্রাব হলে বেশির ভাগ সময় ভয় পেয়ে যায় মেয়েরা। বুঝতে পারে না, কী হচ্ছে বা এরপর কী করা উচিত।
এই বিষয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘শুধুমাত্র মা নয়, বাবাদেরও এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পিরিয়ড সাধারণভাবে একটি জৈব প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ থাকা মোটেও উচিত নয়। বাড়ির পাশাপাশি স্কুলেও এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা দরকার।’
প্রথম থেকেই বাচ্চাকে যেমন ঋতুস্রাব ও মেন্সট্রুয়াল হেলথ সম্পর্কে সঠিকভাবে বোঝাতে হবে, তেমনি তাকে জানাতে হবে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন সম্পর্কে। ঋতুস্রাবের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা কতোটা জরুরি ও সেটা কীভাবে সম্ভব, সেটিও বোঝাতে হবে কিশোরীকেই। ডাঃ দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘ঋতুস্রাব চলাকালীন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে এখান থেকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বহু ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাবও পড়ে। সুতরাং, এগুলো সম্পর্কে মেয়েকে জানাতে হবে ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর ন্যাপকিন পরিবর্তন করা ও সেগুলো ভালোভাবে ডাস্টবিনে ফেলা ইত্যাদি বিষয়গুলো।’
ঋতুস্রাবের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য কোন কোন বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে
# বর্তমান সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পন, মেন্সট্রুয়াল কাপ, পিরিয়ড প্যান্টির মতো নানা প্রডাক্ট বাজারে পাওয়া যায়। যেটিই ব্যবহার করবেন, সেটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তন করা দরকার। যেমন স্যানিটারি প্যাড, ট্যাম্পন, পিরিয়ড প্যান্টি প্রতি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আবার মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে প্রতি ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর তা পরিষ্কার করা উচিত।
# স্যানিটারি পণ্য ব্যবহারের পূর্বে এবং পরে অবশ্যই ভালো করে হাত ধোয়াটা জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, হাত না ধুয়ে যোনি এলাকায় পরিষ্কার করলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেইসঙ্গে যোনি এলাকায় কোনও সুগন্ধি যুক্ত পণ্য ব্যবহার করা যাবে না। পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রতিদিন যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
# মেন্সট্রুয়াল হাইজিন বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সুতির ঢিলেঢালা অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ওই অন্তর্বাস পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org