দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পাখি সুন্দরভাবে ডানার মাধ্যমে উড়ে বেড়ায়। তবে পৃথিবীতে এমন অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে, যারা আসলেও উড়তে পারে না।

আবার অনেক পাখি বিবর্তনের ধারায় ওড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। এইসব পাখি স্থল কিংবা জলজ পরিবেশে বিশেষভাবে অভিযোজিতও হয়েছে। বর্তমানে ৬০টির বেশি প্রজাতির ডানাবিহীন পাখি পৃথিবীতে টিকে রয়েছে, যারমধ্যে এমু, উটপাখি, কিউই, পেঙ্গুইন অন্যতম।
পাখির ওড়ার ক্ষমতা না থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এইসব পাখি এমন এলাকা কিংবা দ্বীপে বসবাস করতো, যেখানে কোনো স্থলজ শিকারিই ছিল না। উড়ে উড়ে শিকারির হাত থেকে পালানোর প্রয়োজন কম ছিল বলেই ওড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা। আরেকটি বিষয় হলো, ওড়ার জন্য পাখির প্রচুর শক্তির খরচ হয়। সেজন্য ডানার পেশি এবং হাড়ের বিশেষ গঠনও প্রয়োজন হয়। ওড়ার প্রয়োজন ছিল না বলে এইসব পাখির ডানা এবং হাড়ের পরিবর্তন কম হয়েছে। ওড়ার পরিবর্তে এইসব পাখি সেই শক্তি দ্রুতই দৌড়ানো কিংবা সাঁতার কাটার জন্যই ব্যয় করেছে। ধীরে ধীরে এইসব পাখির ডানা ছোট হয়ে যায়। ওড়ার ক্ষমতাও লোপ পায়। আবার কিছু পাখি জলজ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হওয়ার কারণেও ওড়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। পেঙ্গুইনরা তাদের ডানা ব্যবহার করে আকাশে ওড়ার পরিবর্তে পানির নিচে সাঁতার কাটার জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাও তৈরি করেছে। এদের ডানা ফ্লিপার হিসেবেও কাজ করে। স্টিমার ডাক প্রজাতির কিছু পাখি উড়তেও পারে না। এরা ডানা পানির ওপর দিয়ে দ্রুত দৌড়ানোর জন্যই অভিযোজিত হয়েছে।
কারণ হলো যেহেতু এইসব পাখি উড়তে পারে না, তাই স্থলভাগে দ্রুত চলাচলের জন্য তাদের পা হয় খুবই শক্তিশালী। উটপাখি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারের বেশি গতিতেই দৌড়াতে পারে। এ ছাড়াও উড়ন্ত পাখিদের বুকের হাড়ে ‘কিল’ নামে বিশেষ একটি হাড়ও থাকে। এই অংশে ওড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিশালী পেশিও সংযুক্ত থাকে, ডানাবিহীন পাখিদের এই অঙ্গটি থাকে না।
উটপাখি আফ্রিকার উন্মুক্ত সাভানা এবং মরুভূমিতে দেখা যায়। এরা বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুততম দৌড়বিদ পাখি হিসেবেও আলোচিত। অস্ট্রেলিয়াতে এইসব পাখি দেখা গেলেও ১৮শ শতকের আগে কিন্তু দেখা যায়নি। এমু অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পরিবেশে দেখতে পাওয়া যায়। উটপাখির পরই এমু দ্বিতীয় বৃহত্তম পাখি।
কাসোয়ারি নামে অপর একটি বড় পাখি পাপুয়া নিউগিনি, উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং আশপাশের দ্বীপপুঞ্জের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনে দেখতে পাওয়া যায়। এদের ছুরির মতোই দেখতে নখ থাকে। এর শক্তিশালী পায়ের জন্যই পরিচিত। আরেকটি আলোচিত পাখি এই কিউই। এটিই নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় পাখি। ছোট, নিশাচর এবং লম্বা ঠোঁটের ডগায় নাসারন্ধ্র থাকে। বিখ্যাত কোটপরা পাখি হলো পেঙ্গুইন। ১৮ প্রজাতির পেঙ্গুইনও রয়েছে। এরা সবই ডানাবিহীন। এদের বেশির ভাগই অ্যান্টার্কটিকা এবং দক্ষিণ গোলার্ধের ঠাণ্ডা অঞ্চলেই বসবাস করে। গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনের মতো কিছু প্রজাতি বিষুবরেখার খুব কাছাকাছি দেখা যায়। এরা সাঁতারেও অত্যন্ত দক্ষ।
ডানাবিহীন অনেক পাখির প্রজাতি অতীতে মানুষের কারণে এবং শিকারি প্রাণীর কারণেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ডোডো এবং মোয়া পাখি এদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে দেখা হয়। তথ্যসূত্র : ব্রিটানিকা অবলম্বনে প্রথম আলো অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org