দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আখ থেকে প্রাপ্ত দু’টি প্রধান খাদ্য উপাদান হলো- পরিশোধিত চিনি ও গুড়। উভয়ই মিষ্টি স্বাদের জন্য ব্যবহৃত হলেও এদের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব একেবারেই এক নয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে, অতিরিক্ত পরিশোধিত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও আখের গুড়ে তুলনামূলকভাবে কিছু উপকারী উপাদান বিদ্যমান থাকায় এটি অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর।
চিনির প্রস্তুত প্রক্রিয়া
আখ থেকে রস সংগ্রহ করার পর বহু ধাপের রাসায়নিক প্রক্রিয়া শেষে সাদা চিনি উৎপাদন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক খনিজ, ভিটামিন ও অন্যান্য জৈব উপাদান প্রায় সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চিনি মূলত “ফাঁকা ক্যালোরি” হিসেবে দেহে প্রবেশ করে। অপরদিকে, আখের গুড় তুলনামূলক কম প্রক্রিয়াজাত। এতে থাকে লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান। ফলে গুড় কিছুটা হলেও পুষ্টিগুণ প্রদান করতে সক্ষম।
স্বাস্থ্যের ক্ষতি ও ঝুঁকি
নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি সেবন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। এতে ইনসুলিনের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণা বলছে, পরিশোধিত চিনি আসক্তির মতো কাজ করতে পারে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। অপরদিকে, আখের গুড়ও মূলত চিনি জাতীয় উপাদান (সুক্রোজ) হলেও এতে থাকা খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, গুড়ে থাকা লোহা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষ ক্ষয় কমায়। তবে এটিও অতিরিক্ত সেবন করলে ওজন বৃদ্ধি বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
পাচন ও শক্তি সরবরাহ
চিনি দ্রুত হজম হয়ে শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দিলেও এটি অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। কিন্তু আখের গুড় অপেক্ষাকৃত ধীরে হজম হয়, ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে। একইসাথে গুড় পাচনতন্ত্রকে কিছুটা সক্রিয় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের পরামর্শ
আধুনিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিনি এবং গুড় উভয়ই অতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর, তবে চিনি তুলনায় বেশি ক্ষতিকর কারণ এতে কোনো পুষ্টিগুণ নেই এবং এটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই যাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের বিশেষভাবে পরিশোধিত চিনি এড়িয়ে চলা উচিত। পরিমিত মাত্রায় গুড় গ্রহণ করলে কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে, তবে সেটিও সীমিত পরিমাণে।
শেষ কথা
চিনি এবং আখের গুড় উভয়ই অতিরিক্ত সেবনে ক্ষতিকর। তবে গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আখের গুড়ে থাকা প্রাকৃতিক খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এটিকে চিনির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর এবং কিছুটা উপকারী করে তোলে। সুতরাং, যদি বিকল্প বেছে নিতে হয়, তবে সীমিত পরিমাণে গুড় সেবন চিনির তুলনায় স্বাস্থ্যসম্মত। তবে সর্বোপরি মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণে সংযমই সুস্থ জীবনের প্রধান শর্ত।
সহজভাবে বলা যায়-
# চিনি বেশি ক্ষতিকর। কোনো ক্যালোরি নেই, কোনো উপকার নেই।
# গুড় তুলনামূলকভাবে ভালো। কিছু খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, তারপরও সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org