দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করলা একটি তিক্ত স্বাদের সবজি হলেও এর ভেতরে রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ। আয়ুর্বেদিক ও প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে করলার ব্যবহার দীর্ঘদিনের।

আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে যে করলা শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়, বরং ওষুধি গুণেও সমৃদ্ধ। করলার ভেতরে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নানা বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ রয়েছে যা মানবদেহের জন্য উপকারী।
করলা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত চারান্টিন, ভিসিন এবং পলিপেপটাইড-পি নামক উপাদান ইনসুলিনের মতো কাজ করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। নিয়মিত করলা খাওয়া রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
করলা লিভারকে সুরক্ষা দেয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লিভারের বিষক্রিয়া কমাতে সহায়তা করে এবং হেপাটাইটিস ও ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। একইসাথে করলা হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
করলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এতে ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের ফ্রি-রেডিকেল দূর করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, করলা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কিছুটা দমিয়ে রাখতে সক্ষম।
করলা হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
করলা ত্বক এবং চুলের জন্যও কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের ব্রণ, একজিমা ও বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। করলা রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে, ফলে ত্বক আরও পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।
করলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে ক্যালোরি ও ফ্যাট খুব কম থাকে কিন্তু ফাইবার বেশি থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমায়। ফলে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য করলা একটি উপকারী সবজি।
তবে করলার সব উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে হলে এটি পরিমাণমতো খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়া বা খালি পেটে গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও অতিরিক্ত নিম্ন রক্তশর্করাযুক্ত রোগীদের করলা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
করলা স্বাদে তিক্ত হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ অমূল্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হৃদরোগ প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ত্বক-চুলের যত্ন- সব ক্ষেত্রেই করলা কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই করলাকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা একটি সুস্থ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org