দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। খাদ্য শরীরকে শক্তি জোগায়, রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষমতা বজায় রাখে।

তবে খাদ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার সঠিক পরিমাণ গ্রহণও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। পরিমিত আহার বলতে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ পরিমাণে খাবার গ্রহণকে বোঝায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিভোজন বা অপুষ্টি উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিমিত আহার অত্যাবশ্যক।
১. পরিমিত আহার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেলে তা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়, যার ফলে স্থূলতা দেখা দেয়। আবার কম খেলে শরীরে দুর্বলতা আসে। নিয়মিত পরিমিত খাবার গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ এবং ফিট থাকে।
২. এটি হজমতন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখে। অতিরিক্ত খাবার পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অপরদিকে, পরিমিত আহার হজমে সহায়ক এবং পাকস্থলীকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৩. পরিমিত আহার হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর। বেশি তৈলাক্ত এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. পরিমিত আহার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। অতিভোজনের কারণে শরীরে ভারীভাব এবং অস্বস্তি তৈরি হয়, যা কাজের মনোযোগ ও মানসিক প্রশান্তি নষ্ট করে। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত ও পরিমিত খাদ্য মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায় এবং মন সতেজ রাখে।
৫. পরিমিত আহার দীর্ঘায়ু এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণা বলছে, যারা পরিমিত আহার করে তারা তুলনামূলক কম অসুস্থ হয় এবং বয়সকালেও সুস্থ থাকে। কারণ শরীর প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টি পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
৬. পরিমিত আহার অভ্যাসগত শৃঙ্খলা গড়ে তোলে। সময়মতো এবং সঠিক পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জৈবিক ঘড়িকে সঠিকভাবে চালনা করে। এতে ঘুম ভালো হয়, হজম স্বাভাবিক থাকে এবং সারাদিন কাজ করার শক্তি বজায় থাকে।
এ ছাড়াও পরিমিত আহার পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত খাবার নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করে ও খরচ কমায়।
অতিরিক্ত বা অল্প আহার দুটোই শরীরের ক্ষতি করে। তাই সুস্থ, কর্মক্ষম এবং সুখী জীবনযাপনের জন্য আমাদের পরিমিত আহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org