দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কৃমি মানবদেহে খুব সাধারণ একটি সমস্যা, যা বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও বিভিন্ন কারণে এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

দেহে কৃমি বাসা বাঁধলে পেটব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, রক্তস্বল্পতা, বমিভাব, দুর্বলতা, মলদ্বারে চুলকানি, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা বিরূপ লক্ষণ দেখা দেয়। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে কৃমি শরীরের পুষ্টি হরণ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
কৃমি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে উপযুক্ত কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণ করা সবচেয়ে জরুরি। সাধারণত অ্যালবেনডাজল বা মেবেনডাজল জাতীয় ওষুধ কৃমি দূর করতে ব্যবহৃত হয়। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাসে একবার কৃমিনাশক খাওয়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে যেসব এলাকায় কৃমির প্রকোপ বেশি।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কৃমি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপায়। খাবার খাওয়ার আগে এবং শৌচাগার ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। রাস্তার খাবার বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি খাবার এড়ানো উচিত। এছাড়া শিশুর নখ বড় রাখতে না দিয়ে নিয়মিত কাটতে হবে, কারণ নখে ময়লা জমে কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা কৃমি সমস্যায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাড়ির পায়খানা পরিষ্কার রাখতে হবে ও নিরাপদভাবে মল নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। পানির উৎস দূষিত হলে কৃমির ঝুঁকি বাড়ে- তাই বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খাওয়াই উত্তম। ঘরদোর পরিষ্কার রাখা, বিছানার চাদর–বালিশ নিয়মিত ধোয়া ও রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা কৃমি প্রতিরোধে সহায়ক।
কৃমির লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় কৃমি পেটে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বমি, ডাইরিয়া বা তীব্র পেটব্যথা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কৃমি থাকলে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কৃমি সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি। নিয়মিত কৃমিনাশক সেবন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস এবং বিশুদ্ধ পানি- এই চারটি বিষয় ঠিকভাবে অনুসরণ করলেই কৃমি সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সুতরাং, কৃমি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা ও প্রতিরোধে সচেতনতা- এই দুই পদক্ষেপই পারে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org