দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টাইফুনের আঘাতে লণ্ডভণ্ড করেছে দিয়েছে ফিলিপাইনকে। তীব্র এই আঘাতে নিহত হয়েছে ১৩৬।
ফিলিপাইনে গতকাল শুক্রবার ভোরে প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান আঘাত হানে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার। ঝড়ের আঘাতে এ পর্যন্ত ১৩৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আজ শনিবার বিকেল নাগাদ ঝড়টি ফিলিপাইন অতিক্রম করবে। হাইয়ানকে এ যাবৎ পৃথিবীতে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফিলিপাইনের আবহাওয়াবিদ রোমিও কাজুলিস জানান, শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে হাইয়ান মধ্যাঞ্চলীয় সামার প্রদেশে আঘাত হানে। ঝড়টি লেইত প্রদেশের ওপর দিয়ে আজ বিকেল নাগাদ ফিলিপাইনের উপকূল অতিক্রম করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যৌথ ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণকেন্দ্র জানায়, হাইয়ান আঘাত হানার সময় ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৩২০ কিলোমিটার। তা সর্বোচ্চ ৩৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানায়, হাইয়ান আঘাত হানার পর উপকূলীয় এলাকার সঙ্গে ফিলিপাইনের টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের কারণে সামার ও লেইত উপকূলে পাঁচ মিটার উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।
ঝড়ের কারণে সকাল থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এটা খুবই শক্তিশালী ঝড়। ফিলিপাইনের রেডক্রসের প্রধান গোয়েনদোলেন পাং বলেন, ‘ঝড়ের কারণে ইতিমধ্যে অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। পাকা ভবনগুলোর ক্ষতি না হলেও অন্যান্য ঘরবাড়িও ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’ হাইয়ানের আঘাতে এখন পর্যন্ত ১৩৬ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
লেইত প্রদেশের গভর্নর রজার মারক্যাদো টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, প্রবল বাতাসের তোড়ে ভেঙে পড়া গাছপালায় রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং এতে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।ঝড়ের কারণে ২০টি প্রদেশের এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। লাখ লাখ লোককে ইতিমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে ফেরি পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার স্কুল এবং সরকারি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ফিলিপাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভবন ধস, সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আগেই প্রায় ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ায় প্রাণহানি অনেক কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অক্টোবরে একই এলাকায় ভূমিকম্পের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আঘাত হানল হাইয়ান। ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে ২০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। গত বছর আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় বোফার আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের ১ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।