দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ তীব্র ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থিত, কারণ বাংলাদেশ টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে, এই টেকটনিক প্লেট ভারত এবং মায়ানমারের মাঝে দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত হিমালয়ের পাদদেশে বিপদ-জনক অবস্থায় আছে, সুতরাং এই টেকটনিক প্লেট যেকোনো বড় ধরণের নড়াচড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেকোনো সময়ে এই টেকটনিক প্লেট নড়েচড়ে উঠতে পারে এবং বাংলাদেশ ভুমিকম্পের প্রভাবে ভয়ংকর ভাবে কম্পিত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের সব বড় শহরে যেভাবে অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণ হয়েছে সে হিসেবে বাংলাদেশে যেকোনো ধরণের ভূমিকম্প হলেই নেমে আসতে পারে চরম মানবিক বিপর্যয়। সুতরাং আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে ৮টি ভয়ংকর ভূমি চ্যুতি এলাকা রয়েছে, এসব অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এসব চ্যুতি অঞ্চল হচ্ছেঃ
- বগুড়া চ্যুতি এলাকা
- রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা
- ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা
- সীতাকুন্ড-টেকনাফ চ্যুতি এলাকা
- হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা
- ডুবরি চ্যুতি এলাকা
- চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা
- সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি)
- রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা
উপরের এসব চ্যুতি এলাকায় যারা বসবাস করেন তাঁরা তো ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছেনই এছাড়া যারা এসব এলাকায় বসবাস করেন না তাদের হাফ ছাড়ার উপায় নেই কারণ বাংলাদেশ আয়তনে কোন বিশাল ভূমি নয় ফলে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার যেকোনো অংশে যদি বড় মাপের কোন কম্পন অনুভূত হয় তবে তা দেশের যেকোনো অঞ্চলকে কাপিয়ে দিতে সক্ষম একই সাথে ঢাকা, চট্রগ্রামের মত বড় শহর সমূহের অপরিকল্পিত নগরায়ন তো মাঝারি মানের কোন কম্পনে মাটির সাথে মিশে গিয়ে মৃত্যু পূরীতে রূপ নিতে পারে যেকোনো সময়ে। আছে কি আপনার এধরণের দুর্যোগ মোকাবেলা করার প্রস্তুতি? হ্যাঁ জানি উত্তর একটি; না নেই! এক্ষেত্রে কেবল আপনার একার নয় স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারেরও এধরণের ভয়াবহ কম্পনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই। ঢাকা সহ দেশের সব কয়টি বড় শহরের নিচে রয়েছে বিশাল জালের নেয় গ্যাস লাইন আর ভূমিকম্প হলে এসব গ্যাস লাইন ফাটবে এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত সুতরাং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভূমিকম্পে যতনা মানুষ মারা যাবে দেয়াল চাপায় তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাবে জীবন্ত আগুনে পুড়ে।
হ্যাঁ আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই তাই বলে ভয়ে ঘাবড়ে গেলে কি হবে? আমরা গরীব দেশ সরকার চাইলেই এখন দেশের সকল ভবন ভেঙ্গে নতুন করে ঘরতে পারবেনা একই সাথে আপনি যদি বাড়ির মালিক হন কিংবা ভারাটিয়া হন তাও আপনারা ইচ্ছে করলেই বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি গড়তে পারবেন না এতে প্রচুর অর্থের দরকার। তবে আমাদের এখন থেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে হবে, হাতে নিতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হোক সেটা সরকার কেন্দ্রিক নতুবা পরিবার কিংবা ব্যক্তি কেন্দ্রিক।
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা আর ১০টা দুর্যোগ থেকে ভিন্ন, অন্যান্য দুর্যোগ হওয়ার আগে পূর্বাভাস পাওয়া যায় কিন্তু ভুমিকম্পের ক্ষেত্রে কোন পূর্বাভাস পাওয়া যাবেনা। হঠাৎ যেকোনো মুহূর্তে এসে দেশকে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে এবং সব ধ্বংস করে দিয়ে যাবে। তবে আমরা পূর্বাভাস না পেলেও সচেতন থাকতে পারি। চলুন জেনেনি কিভাবে আমরা নিজেদের ভূমিকম্প মোকাবেলায় তৈরি রাখতে পারিঃ
১) বাড়ির সকলকে বিপদের সময় শান্ত থাকার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
২) হঠাৎ কম্পন শুরু হলে তাড়াহুড়া না করে আগে থেকে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখুন বাড়ির সবচেয়ে শক্ত এবং নিরাপদ স্থান কোনটা এবং সেখানেই অবস্থান নিতে হবে।
৩) হাতের কাছেই সব সময় কিছু শুকনো খাবার এবং পানি রাখুন।
৪) জরুরী অবস্থার জন্য চার্জ লাইট, ব্যাটারি এসব ঘরে সংরক্ষণ করুন। ঘরের ভেতরে থাকা গ্যাসের চুলা কিংবা বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিন। ভূমিকম্পে বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে এবং গ্যাস লাইন ফেটে আগুন লেগে ক্ষয় ক্ষতি অনেক বেশি হয়।
৫) দিয়াশলাই, শুকনো কাপড়, এন্টিসেপ্টিক হাতের কাছে রাখুন।
৬) যেকোনো ধরণের কম্পন হলেই বাড়ির শিশু, বৃদ্ধ, মহিলাদের নিয়ে যদি সময় পাওয়া যায় তবে খোলামেলা স্থানে চলে যান।
৭) কম্পন শুরু হলে যদি সময় না থাকে তবে তাৎক্ষণিক বাড়ির দরজার নিচে কিংবা গ্রেটবীমের নিচে আশ্রয় নিন। গাড়িতে থাকলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে অবশ্যই গাড়ি রাস্তার বাম পাশে পার্ক করুন।
৮) ভূমিকম্প খুব কম সময়ের মাঝে হয়ে যায় যেমন কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট! এই স্বল্প সময়ের মাঝে আপনি যদি ঘরের বাইরে যেতে না পারেন তবে শক্ত টেবিল কিংবা খাটের নিচে অবস্থান নিন এতে আপনার মাথা কিংবা শরীর ভারী বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা পবে।
৯) যেকোনো বিপদে সবচেয়ে বেশি ভোগায় গুজব, গুজবে কান দেবেন না।
১০) ভূমিকম্প শেষ হয়ে গেলে আপনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ অবস্থানে সরে যান।
সুতরাং এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করুন, বড় মাপের ভূমিকম্প হয়নি কিন্তু হতে কতক্ষণ?
ভূমিকম্প পরবর্তী আরেক দুর্যোগ সুনামি! বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত হওয়ায় এশিয়ার যেকোনো দেশে ভূমিকম্প হলে তার থেকে সৃষ্ট সুনামির সম্মুখীন হতে পারি আমরা যেকোনো সময়ে। দি ঢাকা টাইমসের পরবর্তী জনসচেতনতা মূলক প্রতিবেদন সুনামি নিয়ে, নিরাপদে থাকতে হলে দি ঢাকা টাইমসের সাথেই থাকুন এবং জানুন।