দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাঝে মাঝে প্রকৃতির বৈচিত্র দেখলে অবাক হতে হয়। কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের ধারায় প্রকৃতির আজ এই রূপ। তবে এর অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এমনি অজানা তিনটি গাছের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।
বানর অর্কিড, রেইনবো ইউক্যালিপটাস এবং ওসিরিয়া গোলাপ নামের এই তিনটি গাছ হয়তো অনেকেই দেখেনি বা এগুলোর নামও শোনেনি। এগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী, তবে মজার এবং সুন্দর। সাধারণ গাছের সাথে এদের রয়েছে বিস্তর ফারাক।
বানর অর্কিডঃ
শুধু যে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর চেহারা থাকবে তা ঠিক নয়। বানরের চেহারার সাথে মিলে এমন ফুল ধরে বানর অর্কিডে। এটি ধুসর গোলাপি থেকে লাল বর্ণ ধারণ করে। এর গন্ধ তীব্র বিষ্ঠার মত যদিও অনেকের মতে এর গন্ধ পাকা কমলার মত। এতে সারা বছর ফুল ধরে। ফুলগুলো ৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এই অর্কিডগুলো মোটামুটি ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এবং ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে।
কিছুদিন আগেও এটি অপরিচিত ছিল। ১৯৭৮ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী লুয়ের এর নামকরণ করেন। তিনি এর নাম দেন ড্রাকুলা সিমিয়া। বানরের মত দেখতে এবং ড্রাকুলার মত লম্বা দাঁতের মত অংশ বেরিয়ে থাকায় এর এমন নাম হয়।
বানর অর্কিড দক্ষিণ পূর্ব ইকুয়েডর এবং পেরুতে পাওয়া যায়। এছাড়া ইউরোপ, রাশিয়া, এশিয়া ও ইরানে এটি দেখা গেছে।
রেইনবো ইউক্যালিপটাসঃ
বৈজ্ঞানিক ভাবে ইউক্যালিপটাস ডেগ্লুপ্টা নামে পরিচিত এই গাছ অনেকগুলো রঙের সমাহার। প্রাকৃতিকভাবে এতে রং বিস্তৃত থাকে। বছর বছর এর বাকল পরিবর্তিত হয়। এর ভিতরের বাকল প্রাথমিক ভাবে সবুজ থাকে। পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এর রং পরিবর্তিত হয়ে নীল, তারপর বেগুনী, তারপর কমলা এবং সবশেষে মেরুন রং ধারণ করে। গাছটি চিরসবুজ। এটি প্রায় ৭৫ মিটারের মত লম্বা হয়।
এই অসাধারণ গাছটি ব্যবহার করা হয় কাগজ শিল্পে। শোভাবর্ধক হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত উত্তর গোলার্ধে বিশেষ করে নিউ ব্রিটেন, কেরাম, মিন্ডানাও, নিউ গিনি এবং সুলাওয়েসিতে পাওয়া যায়।
ওসিরিয়া গোলাপঃ
গোলাপ সবাইকে আকর্ষন করে। ওসিরিয়া গোলাপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি মোহনীয় সুগন্ধযুক্ত। এর সুন্দর পাপড়ির ভিতরের দিক গাড় লাল এবং বাইরের দিক রুপালি সাদা। ওসিরিয়া গোলাপ দুই রঙ্গা গোলাপ। পাপড়ির ভিতরের দিক খুবই মসৃণ আর বাইরের দিক সাটিনের মত। এটি দেখলে মনে হয় কৃত্তিম ভাবে রং করা হয়েছে। এই গাছটি সোজা, ৪-৬ ফুট লম্বা হয়। জুন থেকে নবেম্বরের মধ্যে ফুল ধরে। ওসিরিয়া গোলাপ পর্ণমোচী, পরিপূর্ণ ভাবে ফুটলে এগুলোর ফুলের পাপড়ি বিভিন্ন মৌসুমে ঝরে যায় এবং সম্পূর্ণ ঝরতে দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে।
রেইমার কর্ডেস ১৯৭৮ সালে প্রথম জার্মানিতে এটি আবিষ্কার করেন। পরবর্তিতে উইলিয়ামস ফ্রান্স এটিকে ওসিরিয়া নামে ফ্রান্সে পরিচয় করিয়ে দেন।
ওসিরিয়া গোলাপ গাছের কাঠ থেকে এবং কলম করে বংশবিস্তার হয়। এটি সূর্যের নিচে ভাল পানি চলাচলের ব্যবস্থাযুক্ত স্থানে লাগাতে হয়। বড় একটি গর্ত খুঁড়ে তাতে উর্বর মাটি দিতে হবে। গাছের শেকড় মেলে দিয়ে তা ঐ গর্তে স্থাপন করে মাটি ভর্তি করে চেপে দিতে হবে। সম্পূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত ফুল পেতে প্রতিদিন পানি দিতে হবে।
প্রকৃতির বৈচিত্রের মাঝে এই তিনটি চমৎকার গাছ হয়তো তুচ্ছ। কিন্তু চমৎকার বিচিত্রতার কারণে এগুলো মানুষের নজর ও মন খুব সহজেই কাড়ে। বাস্তবে দেখলে সত্যিকার অর্থে বিমোহিত হতে হয়।
সূত্রঃ Amazinglist