দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যাডিডাস এবারের বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল ব্রাজুকা তৈরি করেছে। এর আগের বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল জাবুলানিও তাদের তৈরি। এই নিয়ে তারা গত ১২টি বিশ্বকাপের বল তৈরি করলো। অ্যাডিডাসের তৈরি এর আগের দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপের বল বেশ সমালোচিত হয়েছিল।
অ্যাডিডাস দাবি করছে, তাদের তৈরি এবারের ব্রাজুকা বলে স্পর্শকাতর এবং সূক্ষ্মতা ভালোভাবে নির্ণয় করা হয়েছে। অ্যাডিডাসের পরিচালক বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছে, আমরা এই বলের উড়ন্ত অবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্তকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছি। বায়ুগতিবিদ্যার বিশেষজ্ঞরা বিবিসির কাছে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্বকাপের এই বলটি কতটা কার্যকরী বল হবে তা নির্ধারিত হবে তিনটি ফ্যাক্টরের উপর এর মধ্যে প্রথম ফ্যাক্তরটি হলো বলটি কতটা মসৃণ। বলের মসৃণতার উপর নির্ভর করে বাতাসের সংকটাপূর্ণ অবস্থায় তা বাঁক নিতে পারবে। বাতাসের সাথে বলের এই মসৃণতার কারণে বল বেশি স্পিন করতে পারে না। বাতাসের বাঁধায় বলের এই বাঁক নেওয়ার বিষয়ে নাসা একজন গবেষক বলেন, যখন বল বেশি স্পিন করে তখন সেই বলের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, স্পিনের ফলে বলের গতিপথের এই বেঁকে যাওয়ার নাম ম্যাগনাস প্রতিক্রিয়া। বায়ুগতিবিদ্যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায় ফলে একে আমরা বলে থাকি বেকহামের মতো বাঁকাও।
জাবুলানির মতো ব্রাজুকার এই বেঁকে যাওয়ার প্রবণতা কেমন হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে নাসার গবেষকটি বলেন, এটি নির্ধারণ করা অসম্ভব কেননা বাতাসের গতিবিধির লক্ষণ আপনি আগে থেকে বলতে পারবেন না ফলে সেই বাতাসের সাথে বলের গতিবিধি কেমন হতে পারে তাও নির্ধারণ করা অসম্ভব। একটি বল যত বেশি মসৃণ হবে সেটি তত বেশি গতি অর্জন করতে পারবে। বলের মসৃণতার উপর নির্ভর করে একটি বল গতি হতে পারে প্রতিঘণ্টায় ৮০ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বলের গতি নির্ধারণের দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি হলো বলের বাইরের পৃষ্ঠের রুক্ষতা। ব্রাজুকার গঠন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে দেখা যায় এটি বেশ রুক্ষ। এর এই রুক্ষতার কারণে একে খেলার সময় কিক দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হবে। বলের দুইপ্রান্তের জোড়া অংশটির রুক্ষতা খেলার সময়ের একটি অন্যতম বিশেষ বিবেচ্য বিষয়। ব্রাজুকাতে রয়েছে ছয়টি আলাদা আলাদা প্রপেলার আকৃতির প্যানেল। যেখানে জাবুলানিতে ছিল ৮টি প্যানেল, জার্মানির বিশ্বকাপের বলে ছিল ১৪টি এবং সাধারণ বলগুলোতে থাকে ৩২টি। অ্যাডিডাস বলছে, তাদের নতুন এই বলের জ্যামিতিক আকৃতির জোড়া বলকে আরো বেশি সূক্ষ্মতা দিয়েছে। ব্রাজুকা বলের পৃষ্ঠ লেজার স্ক্যানারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে এর পুরুত্ত ১.৫৬ মিলিমিটার যা সাধারণ বলের চেয়ে আরো তিনগুন বেশি পুরুত্ত সম্পন্ন। বলের রুক্ষতার উপর নির্ভর করে খেলোয়াড়দের বলের কিক দেওয়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। ফলে একটি বলের কিক কতটা কার্যকরীভাবে প্রয়োগ হবে তা বলের রুক্ষতার হিসেবে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
এছাড়া তৃতীয় ফ্যাক্টরটি হলো বাতাসের মুখোমুখি হয়ে বাতাসকে আন্দোলিত করতে পারার প্রবণতা। এর ফলে বলটি অনেক দূরে যেতে পারে এবং নির্ভরশীল উড়তে পারে। একটি সঠিক সুক্ষ মসৃণ বল বাতাসের বাঁধাকে ভালোভাবে অতিক্রম করতে পারবে। কেননা বলের জোড়াতালি কিন্তু বাতাসের বাঁধা গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে বলের গতি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাই বলটি যতটা সুনির্দিষ্ট গোলাকার হবে অর্থাৎ মসৃণতা পাবে ততটা বাঁধাকে সে অতিক্রম করতে পারবে। নাসার গবেষকটি ধারণা করছেন যে, ব্রাজুকা পূর্বের বলের মতোই সমালোচিত হবে এবং এটি গোলকিপারদের জন্য বেশ সমস্যাই করতে পারে। ইটালিয়ান গোলকিপার বুফন বলছেন, এই বলের গতিবিধি পূর্বেরটির মতোই বিভ্রান্তিকর। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার লুইস ফ্যাবিয়ানো বলছেন, এটি সুপার ন্যাচারাল।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি