ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ সুখবর বলা যাবে কিনা জানা নাই আমাদের। আর তা হলো সিলেটের কৈলাশটিলায় আর এক টিসিএফ গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার খবর। কারণ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হোক আর জাতীয় গ্রিডে গ্যাস জমা হোক তাতে সাধারণ জনগণের কোনই লাভ নেই। নতুন বাড়ি করার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের লাইন দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের খবরে জনগণ খুশি হবে কি করে?
জানা গেছে, সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ আরও এক টিসিএফের (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট) বেশি বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স সম্প্রতি এ গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক জরিপ কাজ শেষ করে তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে এ বাড়তি গ্যাসের সন্ধান পায়। এর আগে কৈলাশটিলায় গ্যাসের মজুদ ছিল এক দশমিক ৯ টিসিএফ। বাড়তি গ্যাস যোগ করে বর্তমানে কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত গ্যাস মজুদ দাঁড়াল ৩ টিসিএফের বেশি।
১৬ মে দুপুরে পেট্রোবাংলায় ত্রিমাত্রিক জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফলাফল উপস্থাপন করেন বাপেক্সের কর্মকর্তারা। এসময় বৈঠকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, পরিচালক (পিএসসি) মুহাম্মদ ইমাদউদ্দিন, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুর্তজা আহমেদ ফারুকীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। খবর দৈনিক যুগান্তরের।
জানা গেছে, বাপেক্সের তরুণ ত্রিমাত্রিক জরিপ দল (থ্রিডি সাইসমিক সার্ভেয়ার টিম) কৈলাশটিলা ও সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র দুটির ৩৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে গত ডিসেম্বর মাসে। এর আগে ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রশিদপুর ক্ষেত্র থেকে নতুন করে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয় বাপেক্স।
কৈলাশটিলায় ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ গত বছর ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়। পরে বাপেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৈলাশটিলায় ত্রিমাত্রিক জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফলাফল বলা যাবে। এজন্য কম করে হলেও এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে। সেই প্রেক্ষিতে ১৬ মে বাপেক্স কর্মকর্তারা কৈলাশটিলায় ত্রিমাত্রিক জরিপ শেষে প্রাপ্ত ফলাফল পেট্রোবাংলায় উপস্থাপন করেন। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, কৈলাশটিলায় নতুন করে এক দশমিক ২ টিসিএফ নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর এ ক্ষেত্রে আগের মজুদ ছিল এক দশমিক ৯ টিসিএফ। ফলে কৈলাশটিলার মজুদ দাঁড়াল ৩ দশমিক ২ টিসিএফ। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ত্রিমাত্রিক জরিপে এ ফলাফল এলেও কূপ খননের পর প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এ প্রাপ্তি সম্পর্কে শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাপেক্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অ্যাপ্রাইজাল অব গ্যাসফিল্ড (থ্রিডি সাইসমিক) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সালের এপ্রিলের শেষে রশিদপুর, কৈলাশটিলা, তিতাস, বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র এবং সিলেট অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে ত্রিমাত্রিক জরিপ কাজ করার জন্য সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাপেক্স চুক্তি করে। এ চুক্তির আওতায় বাপেক্স মোট এক হাজার ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ কাজ করবে। এতে প্রায় ১৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল) এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
জানানো হয়, ৫টি ক্ষেত্রের মধ্যে এরই মধ্যে রশিদপুরে ৩২৫, কৈলাশটিলায় ১৯০ এবং হরিপুরে ১৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রশিদপুরে গ্যাস পাওয়ার কথা ঘোষণা করে বাপেক্স। ওই সময় বলা হয়, রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে। আরও প্রায় ৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাপেক্স। এর মধ্যে গ্যাসক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চলে ১ দশমিক ৮৭৩ টিসিএফ নিশ্চিত এবং পূর্বাঞ্চলে আরও ৯৬৭ দশমিক ২ বিসিএফ পাওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। এর বাইরে পূর্বাঞ্চলে আরও ২ দশমিক ৪১৬ বিসিএফ গ্যাস পাওয়ারও আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চলতি বছর থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ বাপেক্স সারাদেশের ৬টি গ্যাসক্ষেত্রে এক হাজার ৮৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ করবে। এর মধ্যে চলতি বছর ফেঞ্চুগঞ্জ ২৫০ বর্গকিলোমিটার, শাহবাজপুর ৬০০ বর্গকিলোমিটার, সুনেত্র ২৬০ বর্গকিলোমিটার, সুন্দলপুর-বেগমগঞ্জ ৪৪০ বর্গকিলোমিটার, সেমুতাং ২৫০ বর্গকিলোমিটার ও সালদা নদীর ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ করবে।
এছাড়া আগামী চার বছর সারাদেশের নয়টি এলাকার এক হাজার ২৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দ্বিমাত্রিক জরিপ চালাবে বাপেক্স। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জে ২২৫ বর্গকিলোমিটার, ভোলায় ২০০ বর্গকিলোমিটার, সাভারে ১০০ বর্গকিলোমিটার, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ১৫০ বর্গকিলোমিটার, মাদানে ১৩৫ বর্গকিলোমিটার, অষ্টগ্রামে ১১৫ বর্গকিলোমিটার, জয়ন্তপুরে ১৩০ বর্গকিলোমিটার, উত্তর ছাতকে ৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং বড়লেখায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জরিপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।