ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তথ্য প্রযুক্তির হাওয়া। তাইতো বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া ভাবাই যায় না। আজ তথ্য প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত সংবাদ-৮ এ বিশ্বের বেশ কিছু তথ্য প্রযুক্তির খবর তুলে ধরা হলো।
ব্লগ ও ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলা ব্লগারদের অংশগ্রহণ ব্যাপক বাড়ছে। একটি ইভটিজিং-এর প্রতিবাদে বাংলা ব্লগ ও ফেসবুকে চলছে প্রতিবাদের তীব্র ঝড়। প্রায় প্রত্যেকটি বাংলা ব্লগ এ সমপর্কে আলাদা আলাদা পোস্ট স্টিকি করে প্রতিবাদ করে চলেছে। যারা এই ইভটিজিং-এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। ঘটনাটির প্রারম্ভিকতা খুবই সাদামাটা ছিল। ধানমণ্ডি ৫/এ অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় এক নারী ইভটিজিং-এর শিকার হন। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর দিক থেকে বেরিয়ে আসা একদল ছেলে (যারা নিজেদেরকে ইউল্যাবের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়) হঠাৎ ওই নারীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করে তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। এ সময় রাস্তায় বহু মানুষের ভিড় ছিল। ছিল পুলিশের চেকপোস্টও। কিন্তু প্রতিবাদ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। সাহস করে যিনি এগিয়ে এলেন তিনি ছিলেন একজন ব্লগার। তাকে অভিযুক্ত ছেলেরা ইউল্যাবের দিকে টেনে নিয়ে বেদমভাবে পেটায়। সাধারণ মানুষ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলেও প্রতিবাদী ব্লগারকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাননি কেউই। বরং ইউল্যাবের আশপাশের দোকানদার, ছাত্ররা সবাই সেই রাতে তাদের পক্ষ নেন এবং বলেন, তিনি (ব্লগার) বাড়াবাড়ি করছেন। রাস্তাঘাটে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। ঘটনাটি ঘটে ১০ মে রাতে। সর্বনাশা ছদ্মনামের এই ব্লগার এই ঘটনা প্রকাশ করেন ইন্টারনেটে। ওই রাতেই তিনি বাংলার সর্বাধিক জনপ্রিয় সামহোয়্যার ইন ব্লগে বিষয়টি নিয়ে ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমি সামুর লক্ষাধিক ব্লগারের সাহায্য চাইছি, এখনই ঃ’ শিরোনামে লিখে অভিযুক্ত ছেলেদের শনাক্ত করার জন্য সবার সাহায্য চান। প্রথমে লেখাটি সাধারণভাবে পোস্ট হওয়ার পর দাবি ওঠে পোস্টটি স্টিকি করার জন্য। ব্লগ মডারেটর শেষ পর্যন্ত লেখাটি স্টিকি করেন। এরপর মুহুর্তেই লেখাটি নিয়ে বাংলা অনলাইন জগতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বলাবাহুল্য, মুহূর্তের মধ্যে বাংলা ইন্টারনেট দুনিয়ায় সর্বনাশার নিবন্ধটি ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার ভোর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পঁয়ত্রিশ হাজারবার এই নিবন্ধটি পড়া হয়েছে, ৮ হাজার ২শ’ চারবার এটি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে এবং ৯৫৫ টি মন্তব্য রয়েছে নিবন্ধটি সমপর্কে। ১০ মে রাত থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উক্ত প্রতিবাদী লেখাটি সামহোয়্যার ইন ব্লগে স্টিকি অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, ব্লগ কর্তৃপক্ষ এই পোস্টটির গুরুত্ব বিবেচনা করে মন্তব্যের ঘরের আইকনের ফরমেট পর্যন্ত পরিবর্তন করে দিয়েছেন এবং সেখানে এই ফরমেট পরিবর্তন সমপর্কে একটি নোটে লিখেছেন, নিম্নের মন্তব্যগুলো বিপরীত ক্রমে দেখানো হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায়, ব্লগারদের সুবিধার্থে এই পোস্টে সর্বশেষ প্রাপ্ত কমেন্টগুলো আগে দেখানো হচ্ছে, যাতে সর্বশেষ আপডেট দেখতে সুবিধা হয়। এই পরিবর্তনগুলো শুধু এই পোস্টের জন্য প্রযোজ্য।
এ ঘটনার প্রতিবাদ শুধু সামহোয়্যার ইন ব্লগেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সময় যতই গড়েছে ততই এই লেখাটি নিয়ে বিভিন্ন ব্লগ পাড়ায় সরব ভূমিকা পালন করেছে ব্লগাররা। বাংলা ব্লগের সাথে ফেসবুক, টুইটার ও গুগল প্লাসেও এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। সামাজিক গণমাধ্যমের পর দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও এ সমপর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া জার্মানভিত্তিক রেডিও ডয়েচে ভেলের অনুষ্ঠানেও ব্লগারদের এই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর উচ্চারিত হয়। এদিকে ইউ ল্যাব কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা ব্লগ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছেন। সেগুলোও ব্লগের প্রথম পেজে স্টিকি লেখার পাশে নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ভোররাতে (রাত ৩ টা ৩ মিনিটের) আপডেট পোস্টে বলা হয়েছে, ইউ ল্যাব কর্তৃপক্ষ ব্লগ স্বত্বাধিকারী সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানাকে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের গঠিত তদন্ত কমিটিতে ব্লগারদের পক্ষ থেকে যেন দু’জন প্রতিনিধিকে দ্রুত মনোনয়নের মাধ্যমে যথাবিহিত অবহিত করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্লগ লেখক ও কর্তৃপক্ষ কয়েকটি তথ্য প্রাপ্তিনিশ্চয়তা সাপেক্ষে আজ ১৭ মে বৃহসপতিবার বিকাল ৫টায় তার মধ্যে অনলাইন/অফলাইন একটিভিস্টদের মনোনীত প্রতিনিধিদের নামসমূহ ইউ ল্যাব কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবে।
২০১৭ সাল নাগাদ মোবাইল বিক্রি হবে ২.২ বিলিয়ন
২০১৭ সালের মধ্যে মোবাইল ফোনের বিক্রি বর্তমানের চেয়ে প্রতি বছর ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ওই বছরে ২.২ বিলিয়ন মোবাইল হ্যান্ড সেট বিক্রি হবে, যার অধিকাংশই হবে স্মার্টফোন। আর স্মার্টফোনের ভিড়ে ইতিহাস হয়ে যাবে আপনার হাতে থাকা আজকের ফিচার ফোন বা বেসিক হ্যান্ড সেটটি। বাজার গবেষণা এবং জরিপ প্রতিষ্ঠান ওভামের বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওভামের বিশ্লেষণে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সাল নাগাদ স্মার্টফোনের বিক্রি ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ১.৭ বিলিয়নে দাঁড়াবে। আর ২০১৭ সালে বিশ্বের ৭৭ শতাংশ হ্যান্ডসেট হবে স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার ফলে ধীরে ধীরে কমে যাবে ফিচার ফোনের ব্যবহার। ২০১৭ সালের দিকে ফিচার ফোন প্রায় ডুবন্ত কিংবা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থানে গিয়ে পৌঁছবে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, হ্যান্ডসেটের এ বিবর্তনের ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কেরও পরিবর্তন হবে। জিপিআরএস, এজ, জিএসএম কিংবা সিডিএমএ থেকে পরিবর্তিত হয়ে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে ডব্লিউসিডিএমএ, এইচএসপিএ, এলটিই, টিডি-এসসিডিএমএ, সিডিএমএ২০০ ইভি-ডিও এবং মোবাইল ওয়াইম্যাক্স। এছাড়াও স্মার্টফোনের বাজারে আগামী ৫ বছর অ্যানড্রয়েডেরই আধিপত্য থাকবে। কারণ ২০১০ সালের চেয়ে ২০১১ সালে অ্যানড্রয়েডে স্মার্টফোনের বাজার ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ৪৪ শতাংশ স্মার্টফোন অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চালিত।
অ্যানড্রয়েডের পরের অবস্থানে থাকবে অ্যাপলের আইওস। ২০১৭ সালে স্মার্ট ফোন বাজারের ২৭ শতাংশ থাকবে তাদের দখলে। দেরিতে শুরু করলেও মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম স্মার্টফোনের বাজারে নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করতে পারবে বলে ওভামের গবেষণায় বলা হয়েছে। স্মার্টফোনের ১৩ শতাংশ বাজার দখলে রাখবে উইন্ডোজ ফোন।
গুগলে ভাগ বসাবে সার্চ ইঞ্জিন বিং
মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন বিং গুগলের একচেটিয়া আধিপত্যের সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে ভাগ বসাতে নতুন সাজে পথচলা শুরু করেছে। বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিংয়ে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো হয়েছে। ৩ বছর আগে বিং চালুর পর এ পর্যন্ত মাইক্রোসফটের অনলাইন বিভাগ ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ লোকসান দিয়েছে। তবে অনলাইন অনুসন্ধানের লাভজনক বাজারে অবস্থান সুসংহত করতে মাইক্রোসফট হাল ছাড়বে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নতুন সাজের বিংয়ে স্ক্রিন নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবহারকারীর অনুসন্ধান করা বিষয়ের সঙ্গে সমপর্কিত বেশিবার অনুসন্ধান চালানো বিষয়গুলো সাজেশন আকারে বামদিকে প্রদর্শিত হয়। স্ন্যাপশট কলাম নামে নতুন একটি ফিচার যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে সার্চ অনুসন্ধানের ফলাফলে মাউসের কারসর রাখলে তার ডানদিকে কয়েকটি ওয়েবলিংক পাওয়া যায়। সাধারণত ম্যাপ, বুকিং বা পর্যালোচনা-জাতীয় ওয়েবলিংক সরবরাহ করা হয় এতে। এসবের মাধ্যমে নামমাত্র সময়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে পারেন ব্যবহারকারী। সামাজিক যোগাযোগে লগইন করা অবস্থায় ব্যবহারকারী তার তালিকাভুক্ত বন্ধুদের অনুসন্ধান বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন কিংবা কোনো কিছু জানতেও চাইতে পারেন। এ জন্য স্ক্রিনের একেবারে ডানদিকে সামাজিক যোগাযোগগুলোর লিংক দেখা যাবে।
বিংয়ের ব্যর্থতায় মাইক্রোসফট প্রতি প্রান্তিকে অনলাইন ব্যবসায় ৫০ কোটি ডলার করে লোকসান দিচ্ছে। কাজেই গুগলের সঙ্গে পাল্লা দিতে বিংয়ের কার্যকারিতা বাড়াতেই মাইক্রোসফট উদ্যোগী হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা জানান, সার্চ ইঞ্জিনের সর্বগ্রাসিতায় গুগলের প্রাধান্য কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডকে মাইক্রোসফটের মোবাইল প্লাটফরম উইন্ডোজের ফোনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০৯ সালের জুনে সেবাদান শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন অনুসন্ধানের বাজারে মাইক্রোসফট বিংয়ের দখলে ছিল ৮ শতাংশ, প্রতিদ্বন্দ্বী গুগল ও ইয়াহু সার্চের দখলে ছিল যথাক্রমে ৬৫ ও ২০ শতাংশ করে। এরপর এখন পর্যন্ত বিংয়ের দখলের পরিমাণ বেড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এতে বিংয়ের সাফল্য যত না বেশি, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ইয়াহুর ব্যর্থতা। ইয়াহুর দখল কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে। আর ৬৬ শতাংশ দখল নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গুগল।
২০১০ সালে সার্চ ইঞ্জিনের ব্যাপারে ইয়াহুর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় মাইক্রোসফট। চুক্তিটির অর্থ ইয়াহুর অনুসন্ধান চালানো হয় আসলে বিংয়ের মাধ্যমেই। এতে প্রতিষ্ঠান দুটি বিজ্ঞাপন রাজস্ব ভাগাভাগি করে। এ ছাড়া গত ২ বছরে ফেসবুকের সঙ্গে সুসমপর্কের সুবিধা নেয় ফেসবুক। তবে তা গুগলের রাজত্বে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০০৭ সালে মাইক্রোসফট
২৪ কোটি ডলারের বিনিময়ে ফেসবুকের ১ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। গুগলকে চ্যালেঞ্জ করা নতুন বিংয়ের সব সুবিধা চালু হবে আগামী মাস থেকে। এ জন্য টেলিভিশন ও ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনও প্রচার করবে মাইক্রোসফট। বিংয়ের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিসা গারি বলেন, এটা বিশাল পরিবর্তন। কোটি মানুষকে অবাক করে দিতে যাচ্ছি আমরা। অনলাইন অনুসন্ধানে এটি মৌলিক পরিবর্তন। বিংয়ের পরিবর্তন সমপর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ভিজিট করুন যাবে www.bing.com/new এই সাইটে।