দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত ‘বউ কথা কও’ পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। বসন্তের শুরুতেই যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলত সেই পাখির দেখা আর পাওয়া যায় না।
রূপকথার কল্প কাহিনী এবং..
হলদে রঙের এই পাখি নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। তার একটি হলো, এক কৃষকের বউ একদিন রান্নার সময় তরকারিতে হলুদ বেশি দেয়। মাঠ থেকে কৃষক ফিরে ভাত খেতে বসলে তরকারিতে হলুদ বেশি দেয়ায় বউকে মারধর করে। এক পর্যায়ে সে বউয়ের মাথায় তরকারির মাটির পাতিল ভেঙ্গে ফেলে। বাড়ির বউ এত অপমান সইতে না পেরে পাখি হয়ে উড়ে যায়! সারা শরীরে হলুদ ও মাথায় পাতিলের কালির কালো রং নিয়ে উড়ে বেড়ায়। দেখতে কিন্তু বউ কথা কও পাখিটি সেরকমই। বিভিন্ন অঞ্চলে এই পাখিকে অনেকে বেনে বউ বলেও চেনে। বউ কথা কও পাখিটির ইংরেজি নাম ইষধপশ যড়ড়ফবফ ড়ৎরড়ষব পাখিটির ঠোঁট থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার।
এরা বাসা বাঁধে কিভাবে
এরা ঝোপঝাড়ের মধ্যে শুকনো ডাল ও খড়কুটা দিয়ে অগোছাল বাসা বানিয়ে থাকে। বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মৌসুম। সাদা রঙের বাদামী ফোঁটাযুক্ত তিন থেকে চারটে ডিম দিয়ে থাকে। মেয়ে ও ছেলে পাখি মিলে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় পনের থেকে সতের দিনে। এরা সব রকম পোকা মাকড় খেয়ে থাকে। সুরেলা কণ্ঠের এই পাখিটি পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
হারিয়ে যাচ্ছে এসব পাখি
আমরা দেখেছি অনেক পুরাতন পাখিই এখন আর দেখা যায় না। বউ কথা কও পাখির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই ঘটেছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন ও ফসলে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, বাসা বাধাঁর মতো পুরাতন গাছ না থাকায় এইসব পাখি কমে যাওয়ার কারণ বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
গ্রামে-গঞ্জে গেলেও এখন আর আগের মতো দেখা পাওয়া যায় না এইসব পাখির। কালে-ভাদ্রে হয়তো দু্’একটি চোখে পড়ে। প্রকৃতির অপরূপ শোভাবর্ধনকারী এসব বিলুপ্ত প্রায় পাখি সংরক্ষণ করা আজ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এখন শহর কেন্দ্রীক সব পরিবেশ তৈরি করে হারিয়ে ফেলছি প্রকৃতির সেই অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশ- যা আমাদের অতিতকে যেমন মনে করিয়ে দেয়। তেমনি অতিতের সকল ঐতিহ্যকে লালন ও সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহিত করে থাকে।