ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দেশের অন্যান্য সেক্টর যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন সম্ভাবনাময় এই পোলট্রি শিল্প ক্রমেই অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা সংকটের কারণে দেশের সম্ভাবনার দ্বার আজ রুদ্ধ হচ্ছে।
সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের পোলট্রি খাত। বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণে একদিন বয়সী বাচ্চা, ডিম ও মুরগির উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় ক্ষুব্ধ সাধারণ খামারিরা। এ খাতে সারাদেশে প্রায় ৬০ লাখ খামারির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ৫ বছর আগে এ ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল দেশের পোলট্রি খাতে। খবর পত্রিকার।
অভিযোগ রয়েছে, বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে আগাম কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। খামারিরা বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে সে ভয়ে অনেক জায়গায় সরকারি কর্মকর্তারা যাননি। এই সুযোগে অনেক খামারি গোপনে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব কারণে বার্ড ফ্লু আরও ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর আগে ২০০৭ সাল থেকে এদেশে বার্ড ফ্লু দেখা দিলেও এ রোগ প্রতিরোধে সরকার তেমন সফল উদ্যোগ নিতে পারেনি। এ ব্যর্থতার কারণে গত ৫ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিম ও মুরগির বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে ডিম ও মুরগির বাচ্চার আমদানি উন্মুক্ত করা হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভারত বার্ড ফ্লু আক্রান্ত একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি প্রতিষ্ঠান বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭৭ লাখ পিস ডিম আমদানি করেছে। এ প্রসঙ্গে পোলট্রি-বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মশিউর রহমান জানান, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাফতানিকারক দেশটি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত তার সনদপত্র জমা দেয়া। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০১২ সালের মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ভারত সরকার ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথের (ওআইই) কাছে হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণের খবর দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পোলট্রি আমদানির সময় ‘ভারতকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত’ দেশ হিসেবে সনদপত্র জমা দিচ্ছে। সূত্র জানায়, বারবার সতর্ক করার পরও ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) বাচ্চা আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে একটি ট্রেডিং ফার্মকে। শালনা বাজারের ব্রাদার্স পোলট্রির মালিক আবুল কাসেম জানান, তার খামার বার্ড ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু প্রাণিসম্পদ অফিসে জানাননি। না জানানোর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গত বছর আমার খামারে বার্ড ফ্লু দেখা দিলে, খবর দিয়েছিলাম কিন্তু কেও আসেনি। তার মতে, গাজীপুর এলাকার প্রায় একশ’ ছোট-মাঝারি খামারি সাম্প্রতিক বার্ড ফ্লু’তে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এলাকায় মুরগি নেই বললেই চলে। খামারিদের ভাষায়, প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে কোন লাভ হয় না। এজন্য বার্ড ফ্লু দেখা দিলে মৃত মুরগি তারা নিজেরাই পুঁতে ফেলেছেন। কেও কেও আবার মুরগি মরা শুরু হলে অবশিষ্ট সুস্থ মুরগিগুলো দ্রুত বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বার্ড ফ্লু’র ওষুধ আমাদের দেশে নেই। রাজশাহীর গ্রামীণ পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির মালিক বিপ্লব জানিয়েছেন, তার খামারটি বাদে প্রায় সবগুলো হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যায় বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণে। রাজশাহীর হ্যাচারিগুলোতে সপ্তাহে ৮০ হাজার বাচ্চা হতো এখন হচ্ছে মাত্র ৮ হাজার। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় ক্ষুব্ধ সাধারণ খামারিরা। একইসঙ্গে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম ও মুরগি আমদানির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তারা।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কারণ পোলট্রি ফার্ম শুধু দেশের মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছে তা নয়, পোলট্রি ফার্ম দেশের বেকারত্ব দূরিকরণে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে এই পেশায় এসেছেন। এবং অনেকে আশানুরূপ ফলও করেছেন। বেকারত্বের অভিশাপ একদিন যাদের চিন্তিত করে তুলেছিল, আজ তারা স্বাবলম্বি হয়েছেন। ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কর্ম করলে যেমন নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়, আবার জাতিকেও কিছু উপহার দেওয়া যায় এমন মনোভাব এসেছে এই পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত যুবকদের।