দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘোড়ার কথা আমরা জানি। কিন্তু কাঠের ঘোড়া তাও আবার ট্রয় নগরীর শুনতে মনে হবে রূপকথার কোন গল্প। কিন্তু এটি রূপকথা নয় বাস্তবের এক ট্রয় যুদ্ধের এমন একটি কাহিনী রয়েছে আজকের চিত্র-বিচিত্র বিভাগে।
আসলে ট্রয় নগরীর যে কাহিনী তা মূলত যুদ্ধ নিয়েই। যুগে যুগে আমরা অনেক যুদ্ধের কাহিনী শুনেছি। কিন্তু আমরা জানি এই যুদ্ধ হয় মানুষে মানুষে। আদি যুগে অবশ্য ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ করা হতো। তখন আধুনিক অস্ত্র ছিল না। একমাত্র ঘোড়ায় করে ঢাল তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ায় ছিল তখনকার যুদ্ধের প্রধান বিষয়।
তবে তখনকার যুদ্ধে জয়ের বিষয় ছিল একমাত্র কৌশল। সৈন্য সামন্তও বিষয় ছিল। তবে কৌশলের কারণে অল্প সৈনিক নিয়েও জয়ী হয়েছে এমন ইতিহাস রয়েছে। এমনই একটি বুদ্ধিদীপ্ত জয় ছিল ট্রয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে একটুখানি বুদ্ধি পরাজয়ের কিনারা থেকে জয়ী করেছিল গ্রিকদের।
আজকের কাহিনী নয় এটি খ্রিস্টপূর্ব ১১৮৪ সালের এক কাহিনী। প্রাচীন গ্রিক এবং ট্রয় যা বর্তমানে তুরস্কে অবস্থিত। এই ট্রয় অধিবাসীদের মধ্যে ট্রয় নগরে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কেনো এই যুদ্ধ হয়েছিল তা শুনলে আশ্চর্য হবেন। এই ট্রয় যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস স্পার্টার রাজা মেনিলাসের সুন্দরী স্ত্রী হেলেনকে অপহরণ করে নিজ বাসভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সে জন্য মেনিলাসের ভাই আর্গসের রাজা আগামেমন গ্রিক নগর সমূহের রাজাদের আহবান করেন ট্রয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।
এরপর কি ঘটলো তাহলে শুনুন। মেনিলাসের ভাই আর্গসের রাজা আগামেমন এক হাজারটি জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের দিকে যাত্রা করেন হেলেনকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছে হেলেনকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। পরে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে টানা ১০ বছর (১১৮৪-১১৯৪) ট্রয় নগরী অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। কিন্তু তাতেও তারা ব্যর্থ হন। টানা ১০ বছর সফলতা না পাওয়ার পর তারা চিন্তা করেন শক্তি দিয়ে তাদের হারানো যাবে না।
এবার বুদ্ধি দিয়ে হারাতে হবে। সেই হিসেবে তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন। তারা বিরাট একটি কাঠের ঘোড়া তৈরি করলেন। যার নাম ছিল ট্রোজান হর্স বা ট্রয়ের ঘোড়া। এই বিরাট কাঠের ঘোড়াটি তৈরি করার পর তার ভিতরে এক দল সৈন্য লুকিয়ে রাখে এবং ট্রয় নগরের দেয়ালের বাইরে তা ফেলে রেখে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকে। এই বিরাট ঘোড়াটি তৈরি করেছিলেন এপিয়াস নামের একজন সুদক্ষ ছুতার। কাঠের ঘোড়াটি ফেলে রেখে পলায়নের ভান করে গ্রিকরা জাহাজে করে নিকটবর্তী টেনিডোস দ্বীপে অবস্থান করতে থাকে। এমনিভাবে গ্রিকরা ট্রয়বাসীদের বোঝানোর চেষ্টা যে, এই ঘোড়াটি তাদের অপরাজয়ের স্মারক হিসাবে উপহার দেয়া হয়েছে। ট্রয়রা আনন্দ উল্লাস করতে করতে ঘোড়াটিকে নগর দেয়ালের ভিতরে নিয়ে যায় এবং তাদের কৃতিত্ব ভেবে নিয়ে উৎসব করতে থাকে। কিন্তু তারা জানেনা যে, ঘোড়ার ভিতরে লুকিয়ে আছে শত্রুপক্ষ ।
এরপর ঘটতে লাগলো আসল কাহিনী। মধ্যরাতে যখন নগরবাসী ঘুমিয়ে পড়লো। সৈন্যরা কাঠের ঘোড়ার খোল থেকে বেরিয়ে এলো এবং নগরের দরজাসমূহ খুলে দিয়ে অন্য গ্রিক সৈন্যদের ভিতরে ঢোকার সুযোগ করে দিল। তারা ভিতরে ঢুকে ট্রয়বাসীদের উপর অর্তকিত হামলা করলো। আর যায় কোথায়। শুরু হলো যুদ্ধ। কিন্তু প্রস্তুতি না থাকায় তারা হলো নাস্তানাবুদ। যাকে সামনে পেল সৈন্যরা তাকেই হত্যা করল এবং এক সময় পুরো ট্রয় নগরীতে আগুন ধরিয়ে দিল। দেখতে দেখতে এক সময় অপরাজিত ট্রয় নগরী ধ্বংস লিলায় পরিণত হলো। এভাবেই বুদ্ধিবলে সেদিন জয় করেছিল ট্রয় নগরী। ইতিহাস এখনও যার স্বাক্ষ বহন করে। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর অনলাইন