ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আবারও সামনে এসেছে টিপাইমুখ। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারত সরকারের আশ্বাস ও লোকদেখানো পদক্ষেপে বিভ্রান্ত না হয়ে বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের চারটি নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন।
৮ জুন দেশটির বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায়। বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হল অ্যাকশন কমিটি অন টিপাইমুখ (এসিটিপ), সিটিজেনস কনসার্ন ফর ড্যামস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিসিডিডি), সেন্টার ফর অর্গানাইজেশন রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (কোর) এবং ফোরাম ফর ইনডিজেনাস পারসপেকটিভ অ্যান্ড অ্যাকশন (ফিপা)। পরিবেশগত ভয়াবহ বিপর্যয় রোধে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে এ সংগঠনগুলো আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকল্প এলাকার আকাশে হেলিকপ্টারযোগে বাংলাদেশী সাংবাদিক দলের ৬ জুনের ২০ মিনিটের চক্কর ‘অনিবার্যভাবেই বাঁধের পক্ষে মত তৈরিতে ব্যবহূত হবে।’ কিন্তু এতে বিভ্রান্ত না হয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে ভারত এই বাঁধ প্রকল্প এগিয়ে নিতে না পারে।
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা যখন বাংলাদেশী সাংবাদিক দলের সফরকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চাইছি, তখন এটা পরিষ্কার যে সাংবাদিক দলটির (আগেকার সংসদীয় প্রতিনিধি দলের আকাশ ভ্রমণসহ) এই আকাশ-জরিপ নিশ্চিতভাবেই ভারত সরকার ও বাঁধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ‘পানি-বিদ্যুৎ পর্যটনের অংশ মাত্র।’ বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়, একটা বাঁধ প্রকল্পের এলাকার ওপর ২০ মিনিটের আকাশ ভ্রমণে প্রকৃতপক্ষে কী বা কতটুকু জানা সম্ভব?
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাঁধ এলাকায় ভারতের যেসব আদিবাসী ও উপজাতীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপদে পড়বে, সেই মানুষের সঙ্গে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা করছে না ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ১৫ বছর ধরে এই বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আজও তাদের কোন অংশই নেই।’ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মূল্যায়নের বরাত দিয়ে ‘বাংলাদেশী জনগণের উদ্দেশে’ বলা হয়, ‘শুধু উজানের বরাক উপত্যকার আদিবাসী ও উপজাতি মানুষের জীবনযাত্রাই নয়, ভাটিতে বাংলাদেশের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশও বিপদাপন্ন হবে এ বাঁধের ফলে। সুতরাং এই সংকটের মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ১০ সাংবাদিকের একটি দল নিয়ে ভারতের আসাম, মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের অন্তর্বর্তী বরাক উপত্যকার টিপাইমুখ বাঁধ এলাকার ওপর দিয়ে ৬ জুন ২০ মিনিট ধরে হেলিকপ্টারে চক্কর দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন। এর প্রতিক্রিয়ায় ৮ জুন ভারতীয় আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে, অভিন্ন বরাক নদীতে (বাংলাদেশে সুরমা) স্থানীয় উপজাতীয়-আদিবাসী ও নদীর ভাটিতে বাংলাদেশের মানুষের বিশাল ক্ষতির আশংকা সত্ত্বেও টিপাইমুখ বাধের পক্ষে বাংলাদেশে জনমত তৈরিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে তারা দেশটি সফর করছেন। অবশ্য, ভারত সরকার দাবি করছে, টিপাইমুখ প্রকল্পটি ‘পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন’ করতেই এই আকাশ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সামপ্রতিক সময়ে ভারতে সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ মন কষা কষি চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই বাঁধের বিরোধীতা করে আসছে। আজ বাংলাদেশের মানুষ সোচ্চার। কারণ এক সময় ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের দেশের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আর সেই সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশ পড়তে চাই না। কোন লোক দেখানো সফর করে এই বাঁধের কাজ যাতে ভারত শুরু করতে না পারে সরকারকে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।