ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু গুদাম সংকটের কারণে সরকারের খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে। বাধ্য হয়ে সংগ্রহ কার্যক্রমও চলছে ধীরে। ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে এক মাস অতিবাহিত হলেও সংগ্রহ সন্তোষজনক নয়।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে বলে খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৮ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় চলতি বোরো মৌসুমে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতি কেজি চালের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮ আর ধান ১৮ টাকা। চাল সরবরাহের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৫৭৭ মিল মালিক তথা মিলারের সঙ্গে চুক্তি করেছে খাদ্য বিভাগ। তার মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ৫ হাজার ৪৩৪, রংপুর বিভাগে ৬ হাজার ৯৪৭, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৮৯২, ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ৬৮৯, সিলেট বিভাগে ৪৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫০ ও বরিশাল বিভাগে ২০ মিলারের সঙ্গে চাল সরবরাহে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগ থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫২ কেজি চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে এ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ২৫১ মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার ৫৯৬ কেজি চাল কেনা হচ্ছে। রংপুর বিভাগ থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৯০ কেজি চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কর হয়। সে অনুসারে রোববার পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এ বিভাগে সংগ্রহের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে এ বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
খুলনা বিভাগ থেকে ৯০ হাজার ২৮১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও গত দেড় মাসে কেনা হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন। এ বিভাগেও সংগ্রহ কার্যক্রম ঢিমেতালে চলছে। বরিশাল বিভাগ থেকে ১ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের টার্গেট ঠিক করা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৯৫ মেট্রিক টন সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। সিলেট বিভাগ থেকে ৬ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। ঢাকা বিভাগ থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার ৬০১ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৮২৯ মেট্রিক টন। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৪১ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন কেনা সম্ভব হয়েছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির খাদ্যশস্য এখনও গুদাম থেকে খালাস হয়নি। নতুন করে নির্মাণ করা খাদ্য গুদামগুলোও এখনও বুঝে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মিলার দ্রুত চাল সরবরাহ করতে চাইলেও তা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে চালের দাম বেড়ে গেলে মিলার আর সরকারি রেটে চাল দিতে চাইবে না। তখন তাকে বলার কিছু থাকবেও না। কারণ সে চাল সরবরাহ করতে চেয়েছে অথচ গুদাম সংকটের কারণে সরকার তা গ্রহণ করতে পারেনি। এ ব্যর্থতা খাদ্য বিভাগের, মিলারদের নয়। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংগ্রহ) মোঃ বদরুল আলম রোববার যুগান্তরকে বলেন, স্থানসংকুলান হচ্ছে না বলেই একটু ধীরগতিতে সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। তা ছাড়া টিআর বরাদ্দও এখনও গুদাম থেকে সরানো হয়নি। নতুন করে নির্মিত গুদামগুলোয় ধান-চাল রাখা হচ্ছে। তবে সংগ্রহ কার্যক্রম কয়েক দিনের মধ্যে আরও গতি পাবে। ৩০ জুনের মধ্যে টিআরের বরাদ্দ এমপিরা তুলে নিয়ে গেলে আর সমস্যা থাকবে না। খাদ্যসশ্য সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও কোন সমস্যা হবে না।