দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ আজ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। মুরার বানর, পিস্তল লেক ও হোলফিনসহ আজব কিছু কাহিনী।
মুরার বানর
বানরটি শুধু ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আমাজোনাস (Amazonas) প্রদেশে বাস করে। বিশেষ করে আমাজোনাসের মাদেইরা (Madeira) নদীর তীরবর্তী বসতি আদিবাসী মুরা ইন্ডিয়ানসদের (Mura Indians) এখানে এ বানর পাওয়া বেশি যায়। তাই তাদের নামানুসারেই এ বানরের নাম- মুরার স্যাডলব্যাক টামারিন (MuraÕs Saddleback Tamarin) বা সাগুইনাস ফুসিকোলিস মুরা। বানরটি ২০০৭ সালে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (WCS) কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়। বানরটি দেখতে খুবই ছোট। এরা লম্বায় ৯.৪ ইঞ্চি, তবে লেজের দৈর্ঘ্য শরীরের চেয়ে বেশি। লেজ প্রায় ১২.৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। এদের ওজন ২১৫ গ্রামের বেশি হয় না। বানরটি গায়ের রঙ বিভিন্ন বর্ণের। এদের দেহ কমলা, সাদা, লাল এবং মুখমণ্ডল কালো ও ধূসর বর্ণের। দূর থেকে এদের পাখি ভাবলে বেশি ভুল করা হবে না। মানুষের কাছাকছি এরা আসতে পছন্দ করে। আকার ও গায়ের রঙের বাহারের জন্য এরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের নজর কেড়ে নিয়েছে।
পিস্তল লেক
লেকটির আকৃতি পিস্তলের মতো। এটি ইউরোপের পাশাপাশি দুটি দেশ হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের সিমান্তবর্তী প্রদেশ লিম্বাগে (Limbug) অবস্থিত। এর দৈর্ঘ ২.৫ কিলোমিটার। ডিমার নামক নদীর খুব কাছেই লেকটি তৈরি করা হয়েছে। ১৯৭০ সালে লেকটি তৈরি করা হয়। তবে প্রথমদিকে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এ লেকটির আকার এমন ছিল না। পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক তৈরি করার সময় এ লেকটির পাড় থেকে মাটি খুঁড়ে নিয়ে এর আকার পিস্তলের মতো করা হয়। পিস্তল লেক নামেই এখন এটি সমাদৃত। এখানে এখন নিয়মিত বিভিন্ন পানির খেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে।
ডলফিন নয় হোলফিন
প্রাণিবিজ্ঞানী ও জিনতত্ত্ববিদদের খেয়ালি পরিশ্রমের ফসল হোলফিন। হোলফিন হচ্ছে সেই প্রাণী যার কিছু অংশ তিমি ও কিছু অংশ ডলফিনের মতো। ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাওয়াই (Hawai) দ্বীপের সি লাইফ পার্কে এ নতুন প্রজাতির প্রাণীর জন্ম। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে এদের সংখ্যা মাত্র ২টি। হোলফিনের বাবা তিমি ও মা ডলফিন। তাই বাবা-মায়ের নাম একসঙ্গে যুক্ত করেই এর এমন নামকরণ। আটলান্টিক মহাসাগরে বসবাসকারী স্ত্রী বোতল নাক ডলফিনের (Botlenose Dolphin, বৈজ্ঞানিক নাম Tursiops truncatus) সঙ্গে খুনে তিমি (Killer Whale, বৈজ্ঞানিক নাম Pseudorca crassidens) নামক পুরুষ তিমির সংকরায়নে নতুন প্রজাতির প্রাণী হোলফিনের জন্ম যার পুরো গঠনের চার ভাগের এক ভাগ তিমি সদৃশ ও বাকি তিন ভাগ ডলফিন সদৃশ। এর গায়ের রঙ ডলফিনের মতো ধূসর এবং তিমির মতো কালো রঙ মিশ্রিত। এদের তিমির মতো দাঁত রয়েছে। এরা তিমির মতো মায়ের স্তন্য পান করে এবং ডলফিনের মতো চৌকস খেলায় মেতে ওঠে।
খালের পুরনো নগর তাইএরচুয়াং
তাইএরচুয়াং পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের জাওচুয়াংতে অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকেই এটি সেনাবাহিনী ও ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ প্রিয় স্থান ছিল। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা তাইএরচুয়াংকে ‘জীবিত খাল’ ও ‘পেইচিং-হাংচৌ খালে সংরক্ষিত একমাত্র পুরাকীর্তি গ্রাম’ বলে আখ্যায়িত করেছে। পরবর্তীতে সময় এটি পুনর্গঠনের পর তাইএরচুয়াং পোল্যান্ডের ওয়ারসো, ইতালির পম্পেই ও চীনের লিচিয়াং শহরের পর বিশ্বের চতুর্থ পুনর্গঠিত পুরনো নগরে পরিণত হয়েছে। ১৯৩৮ সালের বসন্তকালে এখানে হানাদার জাপানি সৈন্যদের সঙ্গে চীনা সৈন্যদের ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে জাপানি সৈন্যদের প্রতিরোধ এবং স্বদেশভূমিকে রক্ষার জন্য ত্রিশ হাজার চীনা সৈন্য প্রাণ হারান। তাই তাইএরচুয়াংকে চীনা জাতির গৌরবস্থান বলেও ডাকা হয়ে থাকে। তাইএরচুয়াং হল চীনের প্রথম প্রণালীর দুই তীরের আদান-প্রদান কেন্দ্র। ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্থানটিকে আদান-প্রদান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার মূল কারণ হল এটির সঙ্গে ১৯৩৮ সালের তাইএরচুয়াং যুদ্ধের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। প্রাচীনকালে চীনের ইতিহাস বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল তাইএরচুয়াং খাল মিং রাজবংশের ওয়ানলি আমলে নির্মিত। ছিং রাজবংশের ছিয়ানলোং আমলে এখানকার জীবনযাপন ছিল সুখী এবং ব্যবসায়ীদের সম্মিলনের একটি সমৃদ্ধ নগরে পরিণত হয়। তবে যুদ্ধের কারণে এ খালের পাশে সমৃদ্ধ নগর ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। ২০০৮ সালে চাওচুয়াং শহরের পৌর কর্তৃপক্ষ তাইএরচুয়াং পুরনো নগর পুনর্গঠনের কথা ঘোষণা করে। তখন প্রণালীর দুই তীরে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়। সে কারণে তাইএরচুয়াং পুরনো নগরের পুনর্গঠন কাজকে দুই তীরের আদান-প্রদান কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণের ধারণা দাখিল করা হয়। যুদ্ধ-ধ্বংসাবশেষের সংরক্ষণ ও পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো নগর তাইএরচুয়াংয়ের খাল-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণ ৭০ বছরের পর আবার ফুটে উঠেছে। পুরনো স্থাপত্য, মন্দির, ছোট ছোট নৌকা, কালো পাথরসড়ক ও পুরনো বন্দর দেখলে মনে হয় যেন প্রাচীনকালে ফিরে গেছি। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা এখানে প্রতিনিয়ত ভিড় করেন।
লামা নয় কামা
দক্ষিণ আমেরিকার গৃহপালিত লোমবহুল প্রাণী লামা (Lama), যার পশম পোশাক তৈরিতে ব্যবহূত হয়। কামা (Cama) হচ্ছে নতুন প্রজাতির লামা যার বাবা ক্যামেল বা উট এবং মা লামা। বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির কথা চিন্তা করে উটাকৃতির মতো বড় আকারের লামার উদ্ভাবন করতে গিয়েই এ নতুন প্রাণী কামার সৃষ্টি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির উট ডোরমেডারি ক্যামেল (বৈজ্ঞানিক নাম-Camelus Dromedarius-যা আরবীয় মরুভূমিতে পাওয়া যায়) এর সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার লামার (বৈজ্ঞানিক নাম- Lama glama) সংকরায়নে কামা প্রাণীটির উদ্ভব হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যামেল রিপ্রোডাকশন কেন্দ্রে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে এর জন্ম। কামা লামার চেয়ে বড় আকারের। কিছুটা দেখতে উটের মতো আবার স্বভাব লামার মতো। রেগে গেলে লামার মতো থুথু ছিটায়। ২০০২ সালে জন্ম নেয় আরেকটি কামা, নাম রাখা হয় কামিলাহ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে এর সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি এবং সবকয়টি টেস্ট টিউব পদ্ধতিতে জন্ম হয়েছে। বর্তমানে এর সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।