দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রতিবছরই বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে শিশুরা অপুষ্টির কারণে মারা যায়। এই মৃত্যুর হার নেহায়েত কম না। যেখানে জাতিসংঘ বার বার শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তারপরও অপুষ্টিজনিত কারণে আমাদের দেশেও বহু শিশু মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পেরুসহ বিভিন্ন দেশেই শিশু মৃত্যুর কারণ হিসেবে অপুষ্টিকেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ি করা হয়ে থাকে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫০ কোটির বেশি শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। আর অপুষ্টিজনিত কারণে প্রতি ঘণ্টায় বিশ্বে মারা যাচ্ছে ৩শ’ শিশু। শুধু খাদ্য ঘাটতির কারণেই বিশ্বে প্রতি বছর ২৬ লাখ শিশু মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে। অপুষ্টির শিকার শিশুদের ৮০ শতাংশই মাত্র ২০টি দেশে বসবাস করে। উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্যপ্রবণ পাঁচটি দেশে এর হার সবচেয়ে বেশি। ভারতে ৪৮ শতাংশ, বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ায় ৪৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৪২ শতাংশ এবং পেরুতে ২৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার।
বৈশ্বিক সেবা সংস্থা সেফ দ্য চিলড্রেনের ‘এ লাইফ ফ্রি ফ্রম হাংগার’ শীর্ষক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসংকট ও দারিদ্র্যতাকেই এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। জরিপভিত্তিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অপুষ্টির শিকার এসব শিশু কোনমতে বেঁচেবর্তে থাকলেও এদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যথেষ্ট বাধাগ্রস্ত হয়। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় এমনকি পরবর্তী ১৫ বছরেও পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে পারে না। ফলে এরা পূর্ণ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারে না, কর্মজীবনে তেমন দক্ষতা দেখাতে পারে না, জাতীয় আয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে না, এমনকি এদের প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়। জরিপের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অপুষ্টির শিকার এসব শিশুর মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ মারাত্মক পুষ্টিহীনতার শিকার। এরা নিজেরা যেমন নানা অসুখ-বিসুখে ভোগে, তেমনি পরিবার, সমাজ কিংবা বিশ্বে ‘বোঝা’ হয়ে বসবাস করে। জরিপে আর বলা হয়েছে, শিশুরা বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে এমন দরিদ্রপ্রবণ ও উন্নয়নশীল ২০ দেশে অধিকাংশ পরিবারের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, যেমন- দুধ, মাছ-মাংস তো দূরের কথা এমনকি প্রয়োজনীয় সবজিও জোগাড় হয় না। আবার যেহেতু খাদ্য ঘাটতিই পূরণ হয় না, সেহেতু এসব দেশের অধিকাংশ পরিবারই সন্তানকে স্কুলে দেয়ার কথা ভাবে না। ফলে এসব শিশু শিক্ষা-দীক্ষা থেকেও বঞ্চিত হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কয়েকটি শিশুরও কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকার মধুবাগের রূপা নামে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেখানে তার ওজন থাকার কথা ছিল পাঁচ কেজি, সেখানে তা মাত্র দুই কেজি। পর্যাপ্ত খাবারের ঘাটতিতেই এ অবস্থা হয়েছে। রূপার মা অন্তরা জানান, তার স্বামী রিকশা চালিয়ে দিনে ৩শ’ টাকা আয় করেন। মাসে তাকে শুধু বাসা (এক কক্ষের টিনের ঘর) ভাড়াই দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। এমনিভাবে নাইজেরিয়া, কেনিয়া ও ভারতের কয়েকটি অনুরূপ স্টাডিও তুলে ধরা হয়। বিশেষত, কেনিয়া ও আশপাশের দেশগুলোতে অনাবৃষ্টি হলে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নাইজেরিয়ায় দরিদ্রপ্রবণ ৯৭ শতাংশ পরিবারই ভালো খাবার কেনার কথা চিন্তাই করে না।
সেফ দ্য চিলড্রেন জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যসামগ্রীর অভাবনীয় মূলবৃদ্ধি এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। সংস্থার প্রধান নির্বাহী জাস্টিন ফরসেথ জানান, শিশুমৃত্যুর হার সম্প্রতি কমে এলেও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ১৯৯০ সালে যেখানে বিশ্বে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী এক কোটি ২০ লাখ শিশু মারা যেত, সেখানে ২০১১ সালে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৭৬ লাখে। এ খবর খুশির হলেও এ সময় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক হারে অনেক বেড়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ক্ষুধা কিংবা অপুষ্টিকে নীরব ঘাতক হিসেবেই চিহ্নিত করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে ২০১২ সালে অলিম্পিক গেমস চলাকালে একইসঙ্গে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সম্মেলন’ আয়োজন করারও আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, উন্নত বিশ্ব যদি এসব দেশে খাদ্যঘাটতি দূর করতে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যসামগ্রীর মূল্য কমাতে ভূমিকা পালন না করে তবে ভবিষ্যতে আমাদের ‘বিকলাঙ্গ’ বিশ্ব বরণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অপুষ্টি দূরীকরণে ফাও, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ উন্নত দেগুলোকে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে। গার্ডিয়ান/বিবিসি/আইবি টাইমস।