ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ পুলিশ জনগণের বন্ধু- পুলিশই জনগণের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। কিন্তু এই পুলিশ যখন নিজেই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে তখন সাধারণ জনগণ কার কাছে যাবে বিচারের জন্য? এমনই ঘটনা ইদানিং ঘটছে।
খবরে প্রকাশ, সামপ্রতিক সময়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। পেশাদার সন্ত্রাসীর মতোই খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণের মতো সব অপরাধে পুলিশ সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের পোশাক পরেই তারা করছে নানা অপকর্ম। তবে ধরা পড়ছে দু’চারজন। বাকিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণ পুরো বাহিনীকে ইমেজ সংকটের মধ্যে ফেলেছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সম্প্রতি পুলিশের আচরণ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়েও। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সদস্যদের ‘কাউন্সিলিং’ শুরু করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেও খুব শিগগির ‘কাউন্সিলিং’ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, গুরুতর নানা অপরাধে গত এক বছরে সারাদেশে ১৩ হাজার ৭৪৫ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের ৩ শতাধিক সদস্য। এ সময় সারাদেশ থেকে পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলে জমা পড়েছে ২০ হাজার ৩০৫টি অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, এখনও এ পেশায় কিছু দুষ্ট লোক রয়েছে। সব পেশার মধ্যেই থাকে। এদের খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, অপরাধ করলে কাওকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৮৮১ জনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে চুরি, ডাকাতি, খুন অথবা ছিনতাইয়ের মতো গুরুতর সব অপরাধ। ১৭ হাজার ২৬৫ জনের বিরুদ্ধে আনা হয় হয়রানি, ঘুষ গ্রহণ ও পেশায় নানা অনিয়ম-অনাচারসহ শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ। বাকি ১ হাজার ১৫৯টি অভিযোগ রয়েছে- ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার।
সূত্র জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্যে ৮ পুলিশ সুপার, ৩ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২২ সিনিয়র সহকারী সুপার, ৪২২ ইন্সপেক্টর, ৭ হাজার ৩৫ এসআই, ৩ হাজার ৭১৮ এএসআই, ১ হাজার ৩১৫ সার্জেন্ট ও টিএসআই, ২ হাজার ৪৩১ হাবিলদার, ১ হাজার ২১৯ নায়েক ও ৩ হাজার ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে জমা পড়া এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের মোট ১৩ হাজার ৭৪৫ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার ছাড়াও চাকরিচ্যুত এবং বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে ১২৮ জনকে। তবে যাদের চাকরিচ্যুত অথবা বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই কনস্টেবল পদমর্যাদার। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের সাবইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর, সহকারী পুলিশ কমিশনার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন দণ্ড বা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, জমা পড়া অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ২ জন পুলিশ সদস্যকে। এর মধ্যে পুলিশের ১২ হাজার ৯৭২ জন কনস্টেবল ছাড়াও ১৯ জন ইন্সপেক্টর, ৭ জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) এবং ৩ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। লঘুদণ্ডের শাস্তি হিসেবে পুলিশের এসব সদস্যকে তিরস্কার ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদোন্নতি এবং বেতন স্থগিত রাখা হয়। অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বেতন স্কেলে দক্ষতাসীমা অতিক্রম বন্ধ, বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ এবং কর্তব্যে অবহেলার জন্য সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ বেতন থেকে আদায় করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সিকিউরিটি সেলে জমা পড়া অভিযোগ তদন্ত করে মোট ৬১৫ জনকে গুরুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬১২ জন কনস্টেবল ছাড়াও ৩ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। গুরুতর অভিযোগে দণ্ডিত এসব পুলিশ সদস্যের বেশির ভাগই পদাবনতি অথবা নিম্ন স্কেলে অবনমিতকরণের শাস্তি পেয়েছেন। অভিযোগ গুরুতর থাকায় অনেককে চাকরি থেকে অপসারণ অথবা বরখাস্ত করা হয়েছে। সদর দফতর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া সদর দফতরে পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে এমন অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে পুলিশের ১ হাজারেরও বেশি সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সাধারণ মানুষই পুলিশ হয়। মানুষ সবাই এক রকম নয়। আর তাই লাখ লাখ ভালো পুলিশের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বোঝানো উচিত কেওই আইনের উর্দ্ধে নয়। তাহলে এই পুলিশ বাহিনী অসাধু ব্যক্তিরা আর তাদের আস্ফালন করতে সাহস পাবে না।
তাছাড়া পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে করা উচিত। যারা দেশের জন্য-দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই শুধু তাদেরই এই বাহিনীতে আসা উচিত- এই প্রচার প্রপাগাণ্ডাও চালানো দরকার।