দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মুসলিম আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পদের সুষম বন্টনের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, মুসলিম আইনে পরিষ্কার ভাবে বলা আছে মৃত ব্যক্তির সম্পদ তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কিভাবে পাবেন। আজ দি ঢাকা টাইমসের এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন মৃত ব্যক্তির উপর তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কতটা সম্পদের অধিকারী হবেন সে বিষয়ে।
একজন মুসলমান যদি মারা যায় তবে তাঁর সম্পদ বন্টনের আগে কিছু বিষয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের বিশেষ মনোযোগ রাখতে হয় এবং ঐ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই কেবল মৃত ব্যক্তির সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করা যাবে।
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদ ভাগের আগে যা করনীয়ঃ
১) যদি মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে তবে তাঁর সম্পদ থেকে তাঁর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা।
২) মৃত ব্যক্তির কোন প্রকারের ঋণ কিংবাদ ধার দেনা থাকলে তা ঐ ব্যক্তির সম্পদ থেকে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা।
৩) মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর দেনমোহোর পরিশোধ হয়েছে কিনা দেখা যদি না হয়ে থাকে তা পরিশোধ করা।
৪) মৃত ব্যক্তি যদি কোন হেবা বা দান কিংবা অসিহত করে যান তবে উল্লেখিত সম্পত্তি দান করে দেয়া।
এবার যদি উপরের কাজ সমূহ করার পরে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তি তাঁর উত্তরাধিকারীদের মাঝে বন্টন করতে হবে। তবে বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ আছে।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কি পরিমাণ পাবেনঃ
স্বামীঃ স্বামী দুই ভাবে স্ত্রীর উপরে সম্পত্তি পাবে,
- যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ।
- যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পত্তি।
স্ত্রীঃ মৃত ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
- যদি মৃত ব্যক্তির এবং তাঁর স্ত্রীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রীর সংসারে কোন সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন।
পুত্রঃ ছেলেরা মৃতের উপরে সকল ক্ষেত্রেই সম্পদ পেয়ে থাকে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ক্ষেত্রে সকলের অংশ ভাগের পর অবশিষ্ট সকল অংশ ছেলে এবং মেয়ে পাবে। তবে এই ক্ষেত্রে ছেলে সম্পদে যে পরিমাণ অংশ পায় মেয়েরা সম্পদের উপরে ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে। যদি মেয়ে না থাকে তবে বাকী সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে।
মেয়েঃ মুসলিম সম্পত্তি আইন অনুযায়ী একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃতের সম্পদ পেয়ে থাকে।
- যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) পাবে।
- যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সবাইকে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) দেয়া হবে।
- যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে উভয়েই থাকে তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে মেয়ে তাঁর অর্ধেক পাবে।
বাবাঃ মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর বাবা ৩ প্রকারে সম্পদ পাবেন,
- যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা আরও নিচে পুত্রের পুত্রের পুত্র যত নিচেই হোক না কেন থাকে তবে মৃত ব্যক্তির পিতা পাবেন সম্পদের ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা নিন্মগামী পুত্র না থাকে কেবল কন্যা থাকে তবে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে তবে বাদ বাকী অংশীদারদের দেয়ার পর সকল সম্পত্তি বাবা পাবেন। মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে যদি বাবাও না থাকে তবে তাঁর জীবিত ভাই পাবে, ভাই না থাকলে ভাইয়ের সন্তান পাবে।
মাতাঃ মৃত ব্যক্তির মা তিন ভাবে সম্পদ পাবেন
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন।
এবার চলুন মুসলিম আইনের কিছু সাধারণ বিষয় জেনে নেয়া যাকঃ
অনেকেই ভাবেন পিতার সম্পদে সন্তানকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করা যায় অর্থাৎ ত্যাজ্য করলে সন্তান সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয় কেউ চাইলে কাউকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করতে পারবেনা।
অনেক ক্ষেত্রে সৎ ছেলে মেয়ের বিষয়টি আসে, কিন্তু ইসলামে পরিষ্কার বলা আছে সৎ ছেলে মেয়ে কখনোই সৎ বাবা মায়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা একই সাথে সৎ বাবা মাও সৎ ছেলে মেয়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা।
ইসলামিক সরিয়া আইনে বলা আছে যদি পিতা বেঁচে থাকতে কোন বিবাহিত সন্তান স্ত্রী এবং সন্তান রেখে মারা যায় তবে ঐ পিতার মৃত্যুর পর পিতার বর্তমানে মৃত সন্তান কোন সম্পদ পাবেনা, কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে উত্তরাধিকার সংক্রান- বিধান সংশোধন করে মৃত ব্যক্তির সম্পদে বিবাহিত মৃত পুত্রের ওয়ারিশরা অংশ পাবে এই বিধান সংযুক্ত করা হয়।
বিদ্রঃ প্রিয় পাঠক এই বিষয়ে আপনার যেকোনো প্রকারের আইনি জিজ্ঞাসা জানার থাকলে মন্তব্যে জানান।