ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবার নতুন করে বন্যার পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। সংবাদদাতারা জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা আবার প্লাবিত হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানাবর্ষণে বিভিন্ন স্থানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ লোক। আর এই পানি বাড়ার কারণে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা ও রোপা আউশ এবং বোনা আমনের ফসলি জমি।
সিরাজগঞ্জ
কয়েক দিন বিরতি শেষে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করায় সিরাজগঞ্জের উজানে এবং ভাটিতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। পানি বাড়া-কমার মধ্যে সিরাজগঞ্জ শহরের উজানে কাজীপুর উপজেলার বিলচতল, মাজনাবাড়ি, শুভগাছা, নাটুয়ারপাড়া, মাইজবড়ি, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলা এবং ভাটিতে চৌহালী উপজেলার প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিনে শিমলা এক নম্বর সলিডস্পারের ৩০ মিটারসহ কমপক্ষে দু’বর্গ কিলোমিটার এলাকার আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাটিতে চৌহালী উপজেলার বোয়ালকান্দি থেকে পাতরাইল-হাটাইল এবং চৌবাড়ি এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি কমেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার সকালে প্রবল বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হাসপাতালপাড়া, রৌমারীপাড়া, হাটির পাড়, স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। জেলা প্রশাসক জানান, ফের বন্যার আশংকায় এবং আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সহায়তার জন্য নতুন করে ২০ লাখ টাকা, এক হাজার মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার পিস লুঙ্গি ও ৫ হাজার পিস শাড়ির চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফের সীমান্তবর্তী ও ভাটি এলাকার শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা দুুই দিনের পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার সীমান্ত নদী জাদুকাটার তীরবর্তী বড়টেক, গড়কাটি, সোহালা, রক্তি নদীর তীরবর্তী আনোয়ারপুর গ্রাম ও বাজারসহ বেশকিছু এলাকায় গতকাল নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাদাঘাট সোহালা, সোহালা ফাজিলপুর-আনোয়ারপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী চাঁনপুর থেকে বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন পর্যন্ত সড়কে পানি উঠে পড়ায় সড়কটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে।
ফটিকছড়ি
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ১ লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার সাড়ে ছয় লাখ মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার অভাব দেখা দিয়েছে। রোববার পর্যন্ত বানবাসীর মাঝে কোন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি।
ছাগলনাইয়া
দু’দিনের টানা বর্ষণ এবং ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। বীজতলা, মাছের ঘেরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের থানাপাড়া সড়ক ডুবে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। পানিতে তলিয়ে গেছে ছাগলনাইয়া একাডেমি ক্যাম্পাস। মুহুরী নদীর পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার প্রায় সব ক’টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
ডিমলা (নীলফামারী)
ভারতের দো-মোহনী পয়েন্ট থেকে রোববার তিস্তার ঢল বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট। প্রচণ্ড ঢলের কারণে তিস্তা ব্যারাজের অদূরে তিস্তা নদী দুটি চ্যানেলে রূপান্তর হয়েছে। মূল চ্যানেল কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট ছাড়াও টেপাখড়িবাড়ির চরখড়িবাড়ি দিয়ে তিস্তা নতুন চ্যানেলে প্রবেশ করেছে। পাশাপাশি নদী বামতীর ও ডানতীরের বাঁধ ঘেঁষে প্রবাহ হওয়ায় বাঁধের হার্ডপয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সিলেট
সিলেটে তিন দিনের পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ফের বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাটের ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। এ ছাড়াও জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে জাফলং, বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ দিনের মাথায় পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বন্যায় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুনর্বাসিত হওয়ার আগেই ফের বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ এখনও বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি। তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা ও রোপা আউশ এবং বোনা আমন ফসলি জমি।