দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কিশোরগঞ্জের ব্যাংক লুটের ঘটনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল দুই বছর আগে। বাস্তবায়নে ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িত বলে র্যাবকে জানিয়েছে মূলহোতা হাবিব ওরফে সোহেল।

কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকে অভিনব কায়দায় টাকা লুটের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হাবিবুর রহমান হাবিব র্যাবকে জানান, দুই বছর আগে থেকে তিনি বাড়ি থেকে হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করেন। এই কাজ করতে তিনি দিনের বেলায়। কারণ দিনের বেলায় যানবাহনের আওয়াজে কোনো শব্দ শোনা যায় না। (তথ্য: বাংলাদেশ নিউজ২৪)
সোনালী ব্যাংকে টাকা চুরির ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী শ্যামপুর এলাকা থেকে হাবিবুর রহমান হাবিব ওরফে সোহেল রানা ও তাঁর সহযোগী ইদ্রিস মিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর রাজধানীর উত্তরায় র্যাবের কার্যালয়ে তাঁদের হাজির করা হয়।
সোনালি ব্যাংকে টাকা লুটের সঙ্গে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরে উদ্ধারকৃত টাকা গণনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। র্যাব জানায়, ১৬ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবকে হাবিব আরও জানান, তিনি দুবাইতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। দেশে ফিরে তার মামাশ্বশুর সিরাজকে ৫ লাখ টাকা ধার দেন। সিরাজ ওই টাকা শোধ করতে না পেরে হাবিবকে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুটের পরামর্শ দেন। টাকা চুরির উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার পাশে দুই বছর আগে টিনশেডের একটি বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। বাড়ির ভাড়া দিতেন আড়াই হাজার টাকা।
হাবিব আরও জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে দেড় বছর পেরিয়ে যায়। একদিন তিনি সোনালী ব্যাংকের ভেতরে পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা তৈরি করে ফেলেন। সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে তিনি একটি আলমারি দেখতে পান। শাবল দিয়ে ওই আলমিরা সরিয়ে দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি। তিনি ব্যাংকে ঢুকে দেখেন টেবিলের ওপরে টাকা স্তূপ করে রাখা। তা দেখেই আবার সে সুড়ঙ্গ দিয়ে বাসায় ফিরে যান। এটি ছিল শুক্রবারের ঘটনা। বাসায় ফিরে বাইরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি। খাওয়া-দাওয়ার পর আগে থেকে ঘরের মধ্যে রাখা সাত-আটটি বস্তা নিয়ে আবার রাত ১০টার দিকে ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্যাংকে ঢোকেন তিনি। হামাগুড়ি দিয়ে একসঙ্গে দুটি করে দুবারে চারটি এবং সবশেষে একটিসহ মোট পাঁচটি টাকার বস্তা ঘরে আনেন। এরপর এক হাজার ও ৫০০ টাকার নোট আলাদা করেন। ৩টি বস্তায় এক হাজার টাকার নোট এবং দুটিতে ৫০০ টাকার নোট ভরেন। বস্তায় নোট ভরতে ভরতে এক সময় শনিবার ভোর হয়ে যায়। সকালে তিনি বাড়ির পাশের একটি চালের দোকানে যান। সেখানে কিছু কথা বলে আবার বাসায় ফিরেন। আবার ওই চালের দোকান এবং পাশের আর একটি দোকান থেকে ২৩০ বস্তা চাল কেনেন। এরপর ১২ হাজার টাকায় ঢাকা আসার জন্য ট্রাক ভাড়া করেন। টাকার বস্তাগুলো প্রথমে অর্থাৎ নিচে রেখে তার ওপর চালের বস্তা রাখা হয়। চালের ও টাকার বস্তা ট্রাকে ওঠাতে হাবিবকে সাহায্য করেন চালকের সহকারী। আসার পথে নরসিংদীতে ট্রাক পাংচার হয়। চালকের সহকারী আগেই টের পান বস্তায় বিপুল পরিমাণ টাকা আছে। এ জন্য হাবিব চালকের মুখ বন্ধ করতে তাঁকে ৭ লাখ টাকা দেন (৫০০ টাকা ১৪টি বান্ডিল)।
হাবিব জানান, ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় আসার পরে তিনি বাসা খুঁজতে থাকেন। সৌভাগ্যক্রমে শ্যামপুর বালুরঘাট এলাকায় ৬ তলা একটি বাসা সাড়ে আট হাজার টাকায় ভাড়া নেন তিনি। আট বস্তা চাল ৫ বস্তা টাকা নিয়ে তিনি বাসায় ওঠেন। মামা শ্বশুরের পরামর্শে বাকি চাল আটরশির একটি ওরসে পাঠিয়ে দেন। একটি কক্ষে চালের বস্তা ও অপর কক্ষে টাকা রাখেন। এরপর অপর মামাশ্বশুর ইদ্রিসকে গত রোববার খবর দেন। ইদ্রিস রোববারের পর থেকে তাঁর সঙ্গে আছেন বলেও জানান হাবিব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসা সোহেল নামে ভাড়া নেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমান লুট হওয়া টাকার উদ্ধার হওয়ায় র্যাব এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে সিনেমা স্টাইলে অভিনবভাবে মাটির নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ করে ভল্টে ঢুকে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লুট করা হয়।