দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের সাথে তার শারীরিক সৌন্দর্য এবং আনুসাঙ্গিক অনেক ব্যাপারই জড়িত। এর মাঝে দাঁত একটা গুরত্বপূর্ন বিষয়। সুন্দর দাঁত এবং হাসি সবারই প্রিয়। কিন্তু সেই হাসিই যদি আশেপাশের মানুষের পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার মুখের দুর্গন্ধের কারণে তাহলে সেটা চিন্তারই কথা। আসুন জেনে নেয়া যাক মুখের দুর্গন্ধের পাঁচটি কারণ সম্পর্কে।
মুখের দুর্গন্ধের পাঁচটি কারণ
১) অপরিচ্ছন্ন মুখ
আমাদের মুখের দুর্গন্ধের জন্য অনেক ব্যাকটেরিয়াও দায়ী। এরা সম্মিলিতভাবে বাজে দুর্গন্ধ তৈরি করে। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় যে ব্যক্তির মুখে দুর্গন্ধ আছে হয়তো সে নিজেও এটা বুঝতে পারছে না বা জানছেন না। সাধারণভাবে মুখের এই বাজে দুর্গন্ধ হ্যালোটসিস নামে পরিচিত।
আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের মুখপাত্র ডাঃ রিচার্ড এইচ এর মতে – আমাদের মুখের দুর্গন্ধের নব্বই শতাংশ কারণই হচ্ছে এই ব্যাকটেরিয়া। আমরা যেসব খাবার খাই সেখান থেকেই এই ব্যাকটেরিয়া জন্মাচ্ছে। আমাদের ভক্ষণকৃত খাদ্যকণা রক্ত, টিস্যুর মাধ্যমে খুব দ্রুত মুখের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং সালফার যৌগ তৈরি করে। মুখের ভেতর তৈরি হওয়া এসব ব্যাকটেরিয়া খুব প্রতিক্রিয়াশীল যা আমাদের জিহবার মাধ্যমে চলনক্ষম। তাই খাবার গ্রহণ করার পর ভালোভাবে দাঁত এবং জিহবা পরিষ্কার করা দরকার।
আজকাল বাজারে যেসব টুথব্রাশ পাওয়া যায় সেটা দিয়ে শুধু দাঁতই নয়, ব্রাশের অপরপৃষ্ঠা দিয়ে জিহবাও পরিষ্কার করা সম্ভব। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে মুখের দুর্গন্ধ শুধুমাত্র ভালো টুথপেস্ট ব্যবহার করলেই রোধ করা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্নতা।
২) স্যালাইভা কমে যাবার ফলে
আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। অনেক সময় এমন হয় যখন আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য না খেয়ে থাকি কিংবা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, তখন আমাদের মুখের ভেতরের অংশটা শুকিয়ে থাকে। আর এই অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। অনেক সময় দেখা যায় ঠাণ্ডা লাগার ফলে আমাদের মুখের ভেতরে যে পরিমান স্যালাইভা (saliva) থাকার কথা সে পরিমান থাকে না। স্যালাইভা মূলত আমাদের মুখের একটা জলীয় অবস্থা। এটা মূলত মুখের ভেতর যাতে ব্যাকটেরিয়া জমতে না পারে সেক্ষেত্রে সাহায্য করে। কিন্তু জিহবা, মুখ শুষ্ক থাকলে এবং পানির পরিমান কমে গেলে ব্যাকটেরিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। গ্রীষ্মকালে বা শীতে এর প্রকোপ অনেকটা বাড়তে পারে।
তাই এই দুর্গন্ধ রোধ করতে দীর্ঘ বিরতিতে খাবার বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া মুখের ভেতরে যাতে লালার নিঃসরণ কমে না যায় তাই পানীয় জাতীয় খাবার খেলেও এর থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
৩) দুর্গন্ধযুক্ত খাবার
আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি, অনেকেই শুধুমাত্র আগে-পরে চিন্তা না করে এমন সব খাদ্য গ্রহণ করি যা আমাদের মুখের দুর্গন্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই আছেন যারা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন খান। এছাড়াও কারো কারো এলকোহল, ধূমপানে আসক্তি থাকে।
এসব জিনিস মুখে দুর্গন্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। American Dietetic Association মুখপাত্র জেনি মলু মনে করেন – এসব খাবার তেল শোষণ করে এবং রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে তিন থেকে চার ঘণ্টা পরে আমাদের শ্বাসতন্ত্রের সাহায্যে দুর্গন্ধ হিসাবে বের করে দেয়।
তাই পেঁয়াজ, রসুন কাঁচা না খেয়ে সেটা তরকারিতে ব্যবহার করেও খাওয়া যায় কিংবা সেসব কাঁচা খেলেও ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করলে বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে অস্বস্তিকর অবস্থা এড়ানো সম্ভব। আর ধূমপান হৃদরোগের কারণ যেহেতু, তাই সেটা পরিহার করাই সর্বোত্তম এবং মাত্রাতিরিক্ত বা স্বল্প মাত্রার এলকোহলের ব্যাপারেও সচেতন থাকা জরুরী।
৪) পর্যাপ্ত শর্করার অভাবে
অনেকেই তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে ডায়েট করার জন্য শর্করা জাতীয় খাবার ( ভাত, আলু, পাস্তা, ময়দা, নুডুলস, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি ) বাদ দিয়ে দেন। শর্করা বা Carbohydrate মূল কাজ হলো আমাদের শরীরে তাপ বা ক্যালরি উৎপন্ন করা, যা আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য খুব দরকারী। আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে মজুদ চর্বি (Fat) তখন কার্বোহাইড্রেট তৈরি করে কিন্তু উপজাত হিসাবে তৈরি করে “ কিটোন বডি”। (তথ্য- Lowcarbdiets )
এই কিটোন বডি অতিরিক্ত মাত্রায় তৈরি হলে আমাদের শ্বাসের সাথে কিছু কিটোন বের হয়ে যায়, যার গন্ধ খুবই বাজে। যারা ডায়েট করার জন্য অনাহারে থাকেন বা অল্প মাত্রার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন তাদের এই সমস্যায় ভুগতে হয় বেশি।
তাই স্বল্প মাত্রার শর্করা জাতীয় খাবার অর্থাৎ শাকসবজি এবং প্রোটিন গ্রহণ করা যেতে পারে মুখের দুর্গন্ধ এড়াতে।
৫) অসুস্থতাজনিত কারণ
শুনতে অবাক লাগলেও আমাদের মুখের দুর্গন্ধের অনেক কারণের মাঝে এই অসুস্থতাও একটি কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। আমরা প্রায়ই গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামক সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকি। GERD ( Gastro esophageal reflux diseases) এই সমস্যা সংক্ষেপে বলা যায় যে আমরা সময়মত না খেলে আমাদের পাকস্থলীতে এসিডের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং গ্যাস ফর্ম করে। সেখান থেকে ব্যাক ফ্লো (Back Flow) এর কারণে দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে কিটোসিস হওয়া ছাড়াও লিভার বা কিডনি সমস্যা থেকে টক্সিন ( Toxin) নির্গত হয় যা শ্বাস যন্ত্রের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধ বৃদ্ধি করতে পারে।
উপরোক্ত এসব কারণ ছাড়াও দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ, বেশি এলকোহল যুক্ত মাউথওয়াশ, জেলি বা ক্যারামেল চকলেট, গামি বিয়ার যা মুখে ব্যাকটেরিয়া তৈরির মাধ্যমে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। একটু সচেতন হলেই আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা এড়াতে পারি।
তথ্য সূত্র– HealthyLiving