ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ইলিশ মাছ আবার ধরা পড়তে শুরু করেছে। ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশের দেখা মিলছে।
উল্লেখ্য, সামপ্রতিক সময়ে ইলিশের চরম আকাল দেখা দেওয়ায় এই ইলিশ খাওয়া যেনো বাঙালিরা ভুলতে বসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত দুদিন হলো ভোলার মেঘনা শাহবাজপুর চ্যানেলে কিছু কিছু ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকায়, মেঘনার ইলিশও ভোলার বাজারে আসতে শুরু করায় আগের চেয়ে দামও কিছুটা কমে এসেছে। ৪ দিন আগেও যে মাছটির দাম ছিল ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। প্রায় এক কেজি আকারের ওই ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ টাকা দামে। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে ওই আকারের ইলিশ বিক্রি হতো মাত্র ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে।
এদিকে রমজান মাসের এ সময়ে বাজারে ইলিশ ওঠায় মাছের আকালও অনেকটা কেটে যাচ্ছে। স্থানীয় চাষের মাছের ওপর চাপও কমছে। বড় আকারের তেলাপিয়া বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২শ’ টাকা কেজি দরে। কাতল বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ’ টাকা দরে। এদিকে দৌলতখান চৌকিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে নোনা পানিতে মিঠা পানির মিশ্রণ বেড়েছে। আর এ পরিবেশের কারণে ইলিশও উঠে আসতে শুরু করেছে। পূর্ণিমার জো পর্যন্ত এ পরিবেশ থাকবে বলে তারা মনে করছে। এখন এক একটি জেলে নৌকায় ৩-৪ হালি করে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে সারাদিনেও ৩টি ইলিশ জেলের জালে ধরা পড়ত না। গত দু’দিন কিছুটা ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে পল্লীতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ইলিশ ধরা পড়ায় নদী এলাকাসহ শহরের অন্যান্য দোকানেও বিকিকিনি বেড়ে গেছে। বাজারগুলোতে মানুষ ইলিশ মাছ কিনতে শুরু করেছে। জেলেরাও নাওয়া-খাওয়া ভুলে নদীতে জাল ফেলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে। যে কোন সময় মেঘনার ইলিশ ফুরিয়ে যাবে এমন আশংকায় জেলেরা কার আগে কে জাল ফেলবে এ নিয়েও প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। জাল ফেলা নিয়ে ছোটখাটো সংঘাতও প্রতিদিন ঘটছে।
এদিকে দাদন ব্যবসায়ীরা জানান, ভোলা জেলার রাজাপুর ইলিশা থেকে চরফ্যাশনের ঢালচর, মনপুরার চরনিজামসহ মেঘনা ও সাগর মোহনায় ইলিশ মাছ ধরার জন্য কমপক্ষে দু’শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। সরকারি হিসাবে প্রতি বছর এ অঞ্চল থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকার ইলিশ মাছ ধরা হয়ে থাকে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক। যা দেশের ও দেশের বাইরের চাহিদা পূরণ করে। আড়ত ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, ভোলার ইলিশ বরিশাল হয়ে প্রতি বছর ভারতে যেত। এ বছরও ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বর্তমানে সরাসরি মাছ রফতানি বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশ বেশি বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে খুচরা মাছ বিক্রেতা জানান, মধ্য মেঘনার মাছঘাটগুলো থেকে ইলিশ মাছ সরাসরি লঞ্চযোগে ঢাকায় নেয়ার ফলে স্থানীয় বাজারে যে হারে মাছ ওঠার কথা সেভাবে আসছে না। ঢাকার ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা মাঝ নদী থেকেই ইলিশ কিনে নিচ্ছে।
ঢাকার বাজারসহ ফেরি করে বিক্রি করা মাছ ব্যবসায়ীদেরও ১ আগস্ট ইলিশ মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত কয়েক মাসে ঘটেনি। ইলিশের হাহাকার কমে গেছে আর তাই বিক্রেতারাও বেশ খুশি। ১ আগস্ট পরিদর্শনে গিয়ে রাজধানীর কাওরান বাজার, নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভাষাণটেক পকেট গেটে ছোট ছোট ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও দাম ছিল কিছুটা বেশি। তবে যে হারে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে তাতে দুএকদিনের মধ্যেই ইলিশের দাম নাগালের মধ্যেই চলে আসবে বলে সকলেই মনে করছেন।
তবে আর যাই হোক ইলিশের খবরে বাঙালিরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বিশেষ করে রমজান আসায় দেশের আপামর মানুষের মধ্যে ইলিশ সংকটের বিষয়টি বেশি করে দেখা দেয়। এখন আবার সকলের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। ইলিশ রফতানি বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তকেও জনগণ স্বাগত জানিয়েছে।